মফস্বল থেকে রাজধানীতে আসতে তদ্বিরকারী সরকারি কলেজ শিক্ষকদের কঠোর সমালোচনা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, তাঁর কাছে এ কাজে যত লোক আসেন, তাঁদের ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জনই ঢাকায় থাকতে চান।
আজ শনিবার রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন সরকারি কলেজের শিক্ষক সংকটের কথা তুলে ধরেন।
মন্ত্রী বলেন, বদলির জন্য ক্ষমতাবান অনেকের কাছ থেকে অনেকে লিখিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু তাঁদের উদ্দেশে বলছি, এখন থেকে বদলির জন্য সবাইকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। কেউ যদি এটি না করে কারও কাছ থেকে লিখিয়ে আনেন, তাহলে সেটা নেতিবাচক হিসেবে গণ্য হবে।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, একটি কলেজে ৩৭টি পদ আছে। কিন্তু কর্মরত আছে মাত্র ছয়জন। সবার শুধু ঢাকা ভালো লাগে। ঢাকার বাইরের ছেলেমেয়েরা কী পড়বে না? মন্ত্রী জানান, তাঁর নিজ এলাকার কলেজেই শিক্ষক সংকট রয়েছে বলে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর বক্তব্য শুরুর আগে দেখা যায়, কয়েকজন অধ্যক্ষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন মন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কিছু কথা বলার জন্য। পরে জানা গেলো তাঁরা সবাই মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আর পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক হওয়ার তদবির করেছেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী দীর্ঘসময় ধরে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ারও বিপক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মতো পাবলিক পরীক্ষা ১০ দিনে শেষ হওয়া উচিত। আপনারা শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা দিয়ে পরিমাপ করবেন, কোন বিষয়গুলো পরিমাপ করলে এসএসসি/এইচএসসি পাশ ধরে নেওয়া যায়। এভাবে সাবজেক্ট ভাগ করে পরীক্ষা নেওয়া যায়।
তিনি শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, কম সময়ের মধ্যে কৌশল করে এই পরীক্ষা নিতে হবে। এই জন্য ডেডিকেটেড ও কমিটেড শিক্ষক দরকার। যিনি সম্পূর্ণ নিরাপত্তার সঙ্গে পরীক্ষা নিতে পারবেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কলেজ পরিচালনার সকল আইন-কানুন ও বিধি-বিধান আপনাদের নখ দর্পণে থাকতে হবে। আমরা আপনাদের কথা জানতে শুনতে ও আপনাদের কাছ থেকে শিখতে চাই। শিক্ষার ও শিক্ষদের মূল লক্ষ্য হল জ্ঞানদানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে সঠিক ভাবে লালন করে গড়ে তোলা।
কোচিং বাণিজ্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শিক্ষকদের কাজের প্রতি আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। শিক্ষকদের উচিত ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ঠিক মত পাঠদান করানো। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অথবা দায়িত্বে অবহেলা করে কেউ যদি প্রাইভেট ভাবে অধিক টাকা অর্জনের পথ নেয় তবে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা বাধ্য হব। কোন ভাবেই দায়িত্বে অবহেলা করে এর দায় এড়ানো যাবে না।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে এর আগেও এ ধরনের একটি কর্মশালা করেছিলাম তবে সেটি খুব একটা ভালো হয়নি। আমরা এই কর্মশালা প্রতি বছর চালিয়ে যেতে চাই। অবকাঠামো ও শিক্ষক স্বল্পতা সহ সীমাবদ্ধতা কথা স্বীকার করে তিনি জানান, বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে আর শিক্ষক রয়েছে ২৫ লাখের মত। যা পর্যপ্তের তুলনা অনেক কম। তবে আমরা এই সমস্যা দূরকরণে কাজ করে যাচ্ছি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সরকারি কলেজগুলোতে এখন বিরাট মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় থেকে এখন একই সাথে বিভিন্ন বিষয়ের উপর অনার্স এমন কি কোন কোন কলেজে মাস্টার্স করার সুযোগও তৈরি হয়েছে। বাজেটে শিক্ষাক্ষাতে ব্যয় তুলনামূলক কমের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। যেহেতু আমাদের শিক্ষাখাতে বাজেট কম সেহেতু সেই অর্থের উপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে। কোন ভাবেই অপচয় করা যাবে না।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, প্রচলিত ও গতানুগতিক শিক্ষায় নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলা যাবে না। এজন্য বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ও আধুনিক জ্ঞান আহরণ করতে হবে। যা আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে অধ্যক্ষদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরিসীম। শিক্ষাদানের পাশাপশি তাদের প্রাতিষ্ঠানিক নানা কাজে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ফাহিমা খাতুন বলেন, সবার জন্য শিক্ষার মান সমান করার লক্ষ্যে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অধ্যক্ষগণদের সাথে নিয়ে এই ধরণের কর্মশালা প্রতি বছর আয়োজন করতে চাই।
অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুনের সভাপতিত্ব করেন।
দ্বিতীয় পর্বে এখন শিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল পর্যন্ত। এ পর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন, শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান ও প্রফেসর জুলফিকার রহমান, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন মোল্লা, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হাবিবুর রহমান এবং চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অঞ্জন কুমার নন্দী বক্তব্য রাখবেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনায় দেশের মোট ৩২৯ টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের নিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ক এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় মোট ২৮৯ টি কলেজ, ১৪ টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, ১৬টি সরকারি কমার্শিয়াল ইনষ্টিটিউট, ৪ টি সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা, ৫ টি এইচএসটিটিআই ১ টি বিএম টিটিআই অধ্যক্ষরা অংশগ্রহণ করেন।