‘বিসিএস ছাড়া ক্যাডার সার্ভিস নয়’ দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন দেশের সব সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। কর্মবিরতি আজ সোমবারও চলবে।
দুই দিনব্যাপী কর্মবিরতির অংশ হিসেবে গতকাল রবিবার প্রথম দিন সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়ে চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ব্যানারে এ কর্মসূচি চলছে।
জানা যায়, কর্মবিরতির কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গতকালের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। আজও পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি কলেজেও পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। সমিতির নেতারা জানান, নতুন জাতীয়করণ হওয়া কলেজগুলোর শিক্ষকদের ক্যাডার মর্যাদা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিমউল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সময় দিতে চাই। এ ছাড়া ডিসেম্বর বিজয়ের মাস।এ মাসে কোনো কর্মসূচি দেব না। দাবি না মানলে জানুয়ারি থেকে আবারও কর্মসূচি চলবে। ’
জানা যায়, সারা দেশে ৩৩৫টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার। ধর্মঘটের কারণে সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষকরা উপস্থিত থাকলেও কোনো ক্লাস-পরীক্ষা নেননি। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কাজকর্ম স্বাভাবিক ছিল।
সিলেটে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা : শিক্ষকদের ডাকা দুই দিনের পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ফলে সারা দেশের মতো দুর্ভোগে পড়েছে সিলেটের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। কর্মবিরতির ফলে গতকাল ও আজ সব পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান, পার্ট-৩) বিশেষ ও স্নাতক কোর্সের পরীক্ষা এবং আজ স্নাতক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এতে সেশনজট বাড়ার আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষার্থী আকতারুজ্জামান বলেন, ‘দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে সরকার ও আন্দোলনরত শিক্ষকরা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান খুঁজলে তা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। ’
গতকাল দুপুরে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে গিয়ে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। দুপুরে কলেজ আঙিনায় নিজেদের দাবি-দাওয়া সংবলিত একটি ব্যানার নিয়ে শিক্ষকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
কুমিল্লার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষকরাও গতকার কর্মবিরতি পালন করেছে।আজও তাদের কর্মবিরতি পালনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
বরিশালে ২৫ কলেজে কর্মবিরতি
বরিশাল অফিস জানায়, বরিশালে কর্মবিরতি পালন করেছেন ২৫টি সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁরা গতকাল রবিবার কোনো পাঠদান করাননি। নতুন করে জাতীয়করণ হয়েছে এবং হতে যাচ্ছে—এমন কলেজশিক্ষকদের বিসিএস ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
সরেজমিনে বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বরিশাল কলেজ, সরকারি আলেকান্দা কলেজ ও সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কোনো ক্লাসে শিক্ষকরা যাননি।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বরিশাল জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান খান বলেন, ‘দেশের ২৮৩ কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে। এতে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু ওই কলেজগুলোতে কর্মরত নন-ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করা কোনো ক্রমেই মেনে নেওয়া হবে না। কারণ আমরা যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে বিসিএসে অংশগ্রহণ করে ক্যাডারভুক্ত হয়েছি। আর এদের যোগ্যতা ছাড়াই ক্যাডারভুক্ত করা হলে শিক্ষার মান নিম্নগামী হবে। ’
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বরিশাল বিভাগীয় সহসভাপতি অধ্যাপক মো. ইউনুস বলেন, ‘রবি ও সোমবার আমরা পাঠদান থেকে বিরত থাকব। ’