আমাদের দেশে বর্তমানে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আছে ৩৩৫ টি। আর বেসরকারি (এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন) মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় প্রতিটি বিষয়ের জন্য বিষয় শিক্ষক রয়েছে। স্টাপিং প্যাটার্ন অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে দ্বিগুনের চেয়েও বেশি। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষকের ৫-৬টি বা তার চেয়েও বেশি বিষয়ে পাঠদান করতে হয়।
এছাড়া সম্প্রতি কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যেগুলো যুগোপযোগী কিন্তু অপরিকল্পিত। অপরিকল্পিত এ অর্থে বলছি যে, এ বিষয়গুলো চালু করার পূর্বে সরকারের নীতি ননির্ধারকদের ভাবার দরকার ছিল এগুলো পড়ানোর মতো শিক্ষক আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে আছে কি না ? নতুন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার পর থেকে শিক্ষকদের উপর আরও চাপ বেড়ে গেছে বিশেষ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি যথেষ্ট কঠিন একটি বিষয়। এ বিষয়ে কোনো জ্ঞান না থাকা শিক্ষক দিয়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চালানো হচ্ছে। আমি লক্ষ্য করেছি অনেক শিক্ষকের চেয়ে শিক্ষার্থীদের আইসিটি জ্ঞান বেশি আছে। এমতাবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করা প্রয়োজন, নইলে আমাদের শিক্ষকদের মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের কাছে কমতে থাকবে।
পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ফলাফলের শীর্ষে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থান নেই বললেই চলে। দ্বিগুণেরও বেশি শিক্ষক এবং বাছাই করা সীমিত শিক্ষার্থী নিয়ে তাদের ফলাফল কেন আশানুরূপ হচ্ছে না এটা পর্যালোচনা না করে শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অনেক শর্ত জুড়ে দেয়া হচ্ছে। আমি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করছি না। আমি বলতে চাচ্ছি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী অনুপাত আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে একই অনুপাত নিশ্চিত করে সকল প্রতিষ্ঠানকে সমান জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।ইদানিং শোনা যাচ্ছে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে বিদ্যালয় ও একটি করে কলেজ সরকারি করা হবে। এতে আমাদের আপত্তি নেই। আপত্তি শুধু একটা ক্ষেত্রে সেটা হলো মডেল স্কুলকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনার জন্য। উপজেলার সেরা প্রতিষ্ঠানকে (সেটা উপজেলা সদর হোক আর প্রত্যন্ত এলাকায় হোক) সরকারি করলে আরো ভালো হতো। প্রতি বছরই উপজেলার সেরা একটি প্রতিষ্ঠানকে সরকারি করলে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হতো এতে শিক্ষার মান আরো বৃদ্ধি পেতো।
লেখক: আশীষ কুমার পাল, প্রধান শিক্ষক, হযরত শাহজালাল (র.) উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট।