যমুনার করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে ডাকাতিয়া মেন্দা সরকারি বিদ্যালয়ের দুটি ভবন। তবু থেমে নেই শিক্ষা কার্যক্রম।
শিক্ষকদের অদম্য আগ্রহে খোলা আকাশের নীচেই চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের যমুনা নদীর তীরবর্তী ডাকাতিয়া মেন্দা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে ৫০ নম্বর ডাকাতিয়া মেন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন চিত্র।
সরেজমিনে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে যমুনা নদীর ওপারে সিরাজগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী ডাকাতিয়া মেন্দা গ্রাম। ১৯৩৮ সালে যমুনার দুর্গম এ চরাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় ৫০ নম্বর ডাকাতিয়া মেন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ২২৬ জন্য কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। চলতি বন্যায় বিদ্যালয়ের ভবন, মাঠ ও রাস্তা প্লাবিত হয়। গত ২৫ জুলাই যমুনার প্রবল স্রোতে ও তীর ভাঙনে বিদ্যালয়ের দুটি ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
সরেজমিনে আরও জানা যায়, যমুনার ভাঙনে বিদ্যালয়ের দুটি ভবন ও সব মালামাল নদীগর্ভে চলে গেছে। তিন মাস ধরে পাঠদানের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকলেও কোনও উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
তবু শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয় মসজিদ মাঠে খোলা আকাশের নীচে পাঠদান করছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষার্থীদের জন্য নেই বেঞ্চ বা ব্ল্যাকবোর্ড, নেই শিক্ষকদের বসার চেয়ার-টেবিল। এলাকাবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু পাটের চট ও প্লাস্টিকের মাদুরের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন দাঁড়িয়েই।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বপন, শামীম, সজীব ও মুক্তা জানায়, খোলা আকাশে মাটিতে বসে পড়তে খুব কষ্ট হয় তাদের। ধুলোবালি ও রোদ লাগে শরীরে। বৃষ্টির দিনে প্রায়ই দৌড়ে মসজিদে যেতে হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিম বাদশা জানান, বিদ্যালয় ভবন নদীতে বিলীন হওয়ায় কষ্ট করে মসজিদ মাঠে পাঠদান করতে হচ্ছে। শিক্ষা কার্যক্রমের কোনও মালামালই নেই। এতে পড়ালেখা চরম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে গেছে। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হলেও এখনও সাড়া মেলেনি।
সরিষাবাড়ীর পিংনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয় বলেন, “ডাকাতিয়া মেন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান স্বাভাবিক রাখতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি টিনসেড ঘর তুলে দেওয়া হবে। “
সরিষাবাড়ী উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, “বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই বিদ্যালয়টির নতুন স্থাপনার কাজ শুরু করা হবে। “