সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের - দৈনিকশিক্ষা

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের

মাছুম বিল্লাহ |
Masum Billah-2
মাছুম বিল্লাহ

সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা মানুষকে উদারতা শেখায়, সবার সঙ্গে মিশতে শেখায়, সৃজনশীলতা তৈরি করে শিক্ষার্থীদের আনন্দে মাতিয়ে রাখে এবং সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার মতো কাজে তাদেরকে উজ্জীবিত করে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন শুধু পড়া, পরীক্ষা আর অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যা হারিয়ে গেছে সংস্কৃতি চর্চা। শিক্ষাঙ্গনে একসময় সংস্কৃচি চর্চা ও খেলাধুলার সুযোগ ছিল অবারিত। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়মিত সংস্কৃতির নানা বিষয় ও খেলাধুলা চর্চা করতো নিয়মিত। বিদ্যালয়ের পাঠাগারের বই পড়ার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাহিত্যচর্চার অভ্যাস গড়ে উঠত। বই পড়ার সংস্কৃতি নিজের মধ্যে গভীরতা তৈরি করে, ভাবতে শেখায়। নিয়মিত চর্চার এক পর্যায়ে প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই বার্ষিক নাটক, আবৃত্তি, সঙ্গীত , বিতর্ক, অভিনয়, কিরাত প্রতিযোগিতা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হতো। হতো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। প্রকাশিত হতো বার্ষিক ম্যাগাজিন, দেয়াল-পত্রিকা। শিক্ষার্থীদের ক্রিয়টিভিটি প্রকাশ পেত এগুলোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগেই ওইসব আয়োজন হতো। আর যেসব স্কুল-কলেজ নির্বাচিত চাত্র-সংসদ ছিল সেখানে একে কেন্দ্র করে চলত ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চা। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ছাড়াও বিভিন্ন হল সংসদ আয়োজন করত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলকেন্দ্রিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনও কাজ করত। ফলে শিক্ষার্থীরা লেখপড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে কেউ নাট্যচর্চা, কেউ সংগীতচর্চা, কেউ বা বিতর্কচর্চা, আবার কেউ কেউ সাহিত্যচর্চায় নিজেদের ব্যস্ত রাখত কিন্তু এখন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেই পরিবেশ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব সাংস্কৃতিক চর্চার পরিবর্তে চর্চ হচেছ লেজুরবৃত্তি রাজনীতির। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হয় তারা মেধাবী শিক্ষার্থী কিন্তু তাদের এই মেধাবী জীবন কেড়ে নিয়েছে ছাত্র রাজনীতি। আমি ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলছি না। ছাত্ররা অবশ্যই রাজনীতি করবে কিন্তু সে রাজনীতি হতে হবে অনুকরনীয়।

একজন ছাত্র নেতাকে দেখে সাধারন শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধায় তাদের মাথা অবনত করবে। কিন্তু এখন কি হচেছ? কোন সাধারণ ছাত্র কোন নেতাকে দূর থেকে দেখলে মাথা নত করেছে কিনা, সালাম দিয়েছে কিনা সেটি নেতারা লক্ষ্য করে। অথচ দেখা যায় ওই সাধারনত ছাত্রটি একজন স্কলার। সে হতে যাচেছ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এসব শিক্ষার্থীরা পরবর্তী জীবনে বিদেশে গিয়ে মনের ক্ষোভে আর দেশে ফেরেনা। কিন্তু আমরা কেউ বিষয়টির খবর রাখিনা। তাদের মেধা দিয়ে তারা সেবা করে উন্নত দেশকে যার প্রয়োজন ছিল আমাদের দেশের। কোন শিক্ষার্থী ভুলে যদি ছাত্র নেতাকে তোয়াজ করা এড়িয়ে যায় তাহলে নেতারা রুমে ডেকে শাসানো থেকে শুরু করে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন পর্যন্ত করে থাকে।কলমের পরিবর্তে হকিস্টীকের শক্তিই বেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আমরা চোখ বুজে থাকলে হবেনা। অবশ্যই এগুলো নিয়ে কথা বলতে হবে।

এতো গেল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচচ মাধ্যমিক স্তরের গতানুগতিক পড়ালেখা শেষ করে উচচশিক্ষায় প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এ পর্যায়ে মুখস্থবিদ্যা বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের এমান্বয়ে নিজেদের গবেষণাধর্মী শিক্ষাসহ নানা কাজে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু উল্টোভাবে চলছে দেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষা ছাড়া বলতে গেল তেমন আর কিছুই হয় না এসব প্রতিষ্ঠানে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মতোই নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর শিখে পরীক্ষা দিতে হয়। শিক্ষার্থীদের আড্ডা দেয়া কিংবা গল্প করার মতো জায়গাও নেই। সাংস্কৃতিক চর্চা, খেলাধুলা আর বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয় না বললেই চলে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নামমাত্র ক্লাব থাকলেও তাতে যুক্ত নেই দশশতাংশ শিক্ষার্থী। নিজস্ব ছাত্রবাস না থাকায় শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকছে বিভিন্ন স্থানে। বেশির ভাগ সময় কাটাচেছ ইন্টারনেট এমনকি অনেকে মাদকের পেছনেও ছুটছে। আর একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো। আর সেটি হচেছ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে মানবিক বিষয়ের, বিজ্ঞানেরা কোন বিষয় পড়ানো হয়না হাতেগোনা দুএকটিতে ছাড়া। শুধু বিজনেস স্টাডি আর বিজনেস ম্যানজেমেন্ট। সবাইকে ব্যবসায়ী হতে শেখায়, মানবিক হতে না। দেশে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮৫টি একাডেমিক কার্যক্রম চালায়। এসব প্রতিষ্ঠানে ৪লাখ ৬৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠার ৭ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু ১৯৯২ সালে যাত্রা করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত ১৭টি সম্পূর্নভাবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেছে। আরও ২৭টি কেউ কেউ জমি কিনেছে বা ভবন নির্মানের কাজ শুরু করেছে। মানবিক বিকাশের জন্য শিক্ষার্থীদের যে জায়গাটি ছিল এখন আর তা নেই। একজন শিক্ষার্থীকে ছবি আঁকা, নাচ-গান, হামদ-নাত, তেলাওয়াত, স্কাউটিং বা কোন চর্চার সাথে যুক্ত থাকতে হয়। সেটা না করে তারা হয়েছে এখন ক্যারিযারসর্বস্ব। তারা পড়ছে কিভাবে অর্থ উপাজর্ন করতে হবে এবং ব্যয় করতে হবে। জীবনের বিরাট এক অংশ তাদের অপূর্ন থেকে যাচেছ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার অভাব, খেলাধুলার অভাব, যথাযথ শিক্ষার অভাব, আদর্শবাদী শিক্ষকের তদারকীর অভাব, সমাজে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ ও পরিবাবের মূল্যবোধ সম্পন্ন পিতামাতার অভাব-এতসব অভাব ও শূণ্যতার মাঝে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢুকে গেছে উগ্রবাদিতা আর জঙ্গীকার্যক্রমের প্রতি ঝোঁক। আমাদের মাধ্যমিক ও উচচ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তরুণ। এই বয়সে তারা নিজেদের কোন না কোন কাজে ব্যস্ত রাখতে, জড়িয়ে রাখতে চায়, নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। শিক্ষার্থীরা ভাল কাজের পরিবেশ পেলে নিজেদের ভাল কাজে জড়ায়, আর তা না হলে অন্যকাজে জড়াবেই। তারা শিল্প-সংস্কৃতির ছোয়া না পাওয়ায় জীবন ও জগতের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারছেনা। বই পড়ার আনন্দের মধ্যে নিজেকে জড়াতে না পারায় তারা নিজের মধ্যে আপন ভুবন তৈরি করতে পারছেনা। তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশও পরিপূর্নভাবে হচেছনা। এ কারনে সামান্য হতাশা কিংবা প্রলোভনের কাছে তারা হার মানে। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, দেশে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তিন কোটি ৬৮ লাখ ২ হাজার ১৮৭জন শিক্ষার্থী আছে। শুধু ক্লাসরুমে ক্লাস নিয়ে আর পাঠ্যবই পড়িয়ে দেশপ্রেম শেখানো যায়না, এর জন্য প্রয়োজন সংস্কৃতির মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা। ছেলেমেয়েরা মাদকে ঝুঁকছে, জঙ্গিবাদে ঝুঁকছে। কারণ তাদের আসলে বাইরের পরিস্থিতি মোকবিলা করার মতো যোগ্যতা তৈরি হয়নি।

এখন পড়ার সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে। টিভির চাকচিক্যের সংষ্কৃতি আর স্মার্টফোনের ব্যবহার, ফেসবুকে মাদকতা এখন আমাদের তরুণ সমাজকে গ্রাস করেছে। ভাবনার বদলে, প্রশ্ন করার বদলে তরুণরা এখন অনুকরনে আকৃষ্ট হচেছ। এই সুযোগে গণমুখী রাজনীতির অভাবটিও পূরণ করছে উগ্রবাদী রাজনীতি। এ অবস্থায় সমাজ ও রাষ্ট্রে অনৈতিক উপার্জনের বিরুদ্ধে নৈতিকতা চর্চা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিকচর্চা জোরদার করতে হবে। শুধু অস্ত্র দিয়ে উগ্রবাদী তৎপরতা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। মানবিকতা তৈরির মাধ্যমেই উগ্রবাদী তৎপরতাকে মোকাবিলা করতে হবে। উগ্রবাদিতা প্রথম আসে মন থেকে , কাজেই মনকে প্রথম পরিশুদ্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত পরিবেশ থেকে আসে এই চিন্তা।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা হবে তখন চারদিকের পরিবেশও ভাল হবে। আমাদের দেশে উগ্রবাদিতার যথেষ্ট সুযোগ নেই কারন এখনকার মানুষ ধর্মের দিক দিয়ে উদার। কিছু কিছু মানুষের মধ্যে এটি হয়তো আছে কিন্তু সাধারনভাবে দেশের অধিকাংশ মানুষ উদার।

শিক্ষার পাশাপাশি সংস্কৃতিচর্চা এখন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। প্রকৃত মানব হিসেবে গড়ে ওঠার অপরিহার্য উপাদান হচেছ সংস্কৃতিচর্চা। লেখাপড়ার চাপ আর প্রতিযোগিতা ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়াচর্চা না হওয়ার আর একটি কারন হচেছ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলার মাঠ না থাকা। যেসব প্রতিষ্ঠানে মাঠ নেই সেগুলোতে জাতীয় সংগীতও ঠিকমতো গাওয়া হয়না। অনেক প্রতিষ্ঠানে মাইকে জাতীয় স্গংীত বাজানো হয়, শিক্ষার্থীদের কন্ঠও মেলাতে হয়না। জাতীয় সঙ্গীত যখন বাজানো হয় এবং শিক্ষার্থীরা যদি মন দিয়ে তা গায় তাহলে তাদের মনে আলাদা এক ধরনের অনুভূতি, আলাদা এক ধরনের দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি অনুসারে পড়াশোনার চাপ এতবেশি যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রুটিন শেষ করতেই হিমশিম খাচেছ। সারা বছর ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চার কোন সুযোগই নেই। শহরের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বছরে একবার ক্রীড়া-সাংষ্কৃতিক সপ্তাহ পালিত হয়। এর মধ্যেই যতটা সম্ভব প্রতিযোগিতা করে পুরুস্কার দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত শহরের স্কুল কলেজে খেলার মাঠ নেই, কারন জমি নেই কিন্তু জনসংখ্যার চাহিদার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচেছ। এসব প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড কিভাবে চালানো যায়, খেলাধুলার ব্যবস্থা কিভাবে করা যায় তা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার সময় এসেছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের শর্তানুসারে পাঠাগার থাকা বাধ্যতামূলক। সেই হিসেবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই মোটমুটিমানের একটি পাঠাগার থাকে।কিন্তু তাতে নেই গ্রন্থাগারিক। আবার গ্রন্থাগারিক থাকলেও তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলো দেওয়ার কাজটি বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা কিংবা প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকছেন। কোন কোনো প্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি আছে কিন্তু শিক্ষার্থীরা বই পড়া থেকে বঞ্চিত হচেছ। কারন বই পড়ার আলাদা কোন সুযোগ , সময় কিংবা পরিবেশ নেই। এ অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুটিনে ’ লাইব্রেরি ঘন্টা বা লাইব্রেরি ক্লাস’ অন্তভূক্ত করার এবং সপ্তাহে অন্তত একটি ক্লাস ’লাইব্রেরি ঘন্টা হিসেবে নির্ধারনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিশ্বাসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপাত অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। মন্ত্রণালয় এখনও বিষয়টির অনুমোদন দেয়নি। উল্লেখ্য যে, প্রতিটি ক্যাডেট কলেজে প্রতিদিন একটি করে লাইব্রেরি ক্লাস থাকে প্রতিটি শ্রেণির। ফলে তাদের কিছু না কিছু পড়তেই হয় ঐ একটি পিরিয়ডে। এভাবে প্রতিদিনে তারা অনেক নতুন লেখক এবং বইয়ের সাথে পরিচিত হয়। বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এই বিষয়টি নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়না তা যত ভাল বা নামকরা প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন। ব্র্যাক পরিচালিত পরীক্ষামূলক মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহেও একই নিয়ম অনুসরন করা হয় অর্থাৎ তাদের নিয়মিত লাইব্রেরি ক্লাস করতে হয়। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) সূত্রে জানা গেছে, দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের ২০হাজার ২৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১ হাজার ৪৫৪টি প্রতিষ্ঠানে সহকারী গ্রন্থাগারিক রয়েছেন। আর ৯হাজার ৩১৯টি মাদ্রাসার মধ্যে ৪১৯টিতে রয়েছেন সহকারী গ্রন্থাগারিক। বর্তমানে যারা সমাজের উচচপদে এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি তাদের স্কুল ও কলেজ জীবনে দেখা গেছে প্রাতিষ্ঠানিক লাইব্রেরি থেকে নিয়মিত বই নিতেন, বই পড়তেন। কিন্তু এখন ক’জন শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে যে, পাঠ্যবইয়ের বাইরে তারা অন্য বই নিয়মিত পড়ছে? বই পড়ার মাধ্যমে যে বইরের জগতের সাথে পরিচিত হতে হয়, সে বিষয়টি যেন ভুলতেই বসেছি সবাই পাবলিক পরীক্ষার চাপে। সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশকদের সাথে কথা বলে হতাশ হতেই হয়। তারা অনেক লেখকের সৃজনশীল বই প্রকাশ করেন কিন্তু বইয়ের পাঠক নেই। তারা যেন আর আগাতে চাননা, আগাতে পারছেন না, আর যেন বই প্রকাশ করতে চাননা। কাদের জন্য বই ছাপবেন? শিক্ষার্থীরা তো বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে। এ অবস্থার অবসান দরকার।

আবার দেশের স্কুল-কলেজগুলোতে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চা যেটুকু হচেছ তা হচেছনা মাদ্রাসা কিংবা ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চা তো দূরের কথা , জাতীয় সঙ্গীত পর্যন্ত গাওয়া হয়না সেখানে। শিক্ষার্থীরা যদি জাতীয় দিবসগুলো পালন না করে তাহলে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগবে কিভাবে? সাংস্কৃতিক চর্চা না হলে তাদের মধ্যে সংবেদনশীলতা, মানবিকতাবোধ তৈরি হবে কিভাবে?আমাদের শিক্ষালয় আসলে তিনটি- পরিবার, বিদ্যালয় ও পথ। পারিবারিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহন করলেও যদি বাইরের জগতের সাথে ছেলেমেয়েরা ঠিকভাবে মানিয়ে নিতে না পারে তবে সেই শিক্ষা অপরিহার্য নয়। ম্যাক্সিম গোর্কি ’ পৃথিবীর পথের কথাই বলছেন। ১২বছর বয়সে ঘর ছেড়ে বের হয়ে তিনি শিক্ষিত হয়েছিলেন প্রকৃতির পাঠশালায়। তার উপন্যাস ’–আমার ছেলেবেলা’, ‘পৃথিবীর পথে’, ‘পৃথিবীর পাঠশালায়’ বাইরের জগতের কথা বলে।

আমারা ছেলেমেয়েদের বাধবাধকতার সঙ্গে গড়ে তুলি। এটা করোনা, ওটা করোনা। এর ফলে তারা নিজেদের মতো করে তৈরি হয়না। তৈরি হয় আমাদের অভিভাবকত্ব দিয়ে, অনুশাসনের মাধ্যমে। এটা তাদের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি সমাজের জন্য । কারন সে সমাজের মতো করে তৈরি হয়না। ছেলেমেয়েরা যখন বাইরে যায় তারা সেখানে নিজেদের সেভাবে মানিয়ে নিতে পারেনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন ’ যতটুকু অত্যাবশ্যক কেবল তাহারই মধ্যে কারাুরদ্ধ হইয়া থাকা মানবজীবনের ধর্ম নহে। আমরা কিয়ৎ পরিমাণে আবশ্যকশৃংখলে বন্ধ হইয়া থাকি এবং কিয়ৎ পরিমাণ স্বাধীন। আমাদের দেহ সাড়ে তিন হাতের মধ্যে বন্ধ, কিন্তু তাই বলিয়া ঠিক সেই সাড়ে তিনহাত পরিমাণ গৃহ নির্মাণ করিলে চলেনা। স্বাধীন চলাচলের জন্য অনেকখানি স্থান রাখা অত্যাবশ্যক। নতুবা আমাদের স্বাস্থ্য এবং আনন্দের ব্যাঘাত হয়। শিক্ষা সম্বন্ধেও একই কথা প্রযোজ্য কিন্তু আমরা তা বুঝব কবে?

লেখক: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত প্রাক্তন ক্যাডেট কলেজ শিক্ষক।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031208992004395