শিশু সুমাইয়া খাতুন (৭) ও মেহজাবিন আক্তারকে (৬) হত্যা করে প্রতিবেশী লাকী আক্তার ১২ আনা স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়েছেন, যা বিক্রি করে পেয়েছেন ২১ হাজার টাকা। অর্থাৎ স্যাকরার বাটখারার হিসেবে দুটি শিশুর জীবনের দাম ২১ হাজার টাকা। ওই গয়নার লোভেই শিশু দুটিকে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে আদালতকে বলেছেন লাকী আক্তার। ঘটনাটি ঘটে ১২ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের একটি মহল্লায়।
গয়নার জন্য শিশু খুনের ঘটনা এই প্রথম নয়, মাঝেমধ্যেই এমন খবর নজরে আসে। ছোট্ট কানের দুল কিংবা পাতলা চেইনের জন্য প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা। ঘটছে গুম-অপহরণের ঘটনাও।
বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ১৭টি সংবাদ ঘেঁটে দেখা যায়, স্বর্ণালংকারের জন্য খুন হওয়া শিশুদের বয়স সাধারণত ৪ থেকে ১০ বছর। অর্থাৎ স্বর্ণালংকারের জন্য অবুঝ শিশুরাই খুনের শিকার বেশি হচ্ছে। মূলত প্রতিবেশী এবং নিকটাত্মীয়রাই এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে।
২০০৭ সালে এক আনা ওজনের স্বর্ণের কানের দুলের জন্য প্রতিবেশীর হাতে খুন হয় নাটোরের ছয় বছরের শিশু মুক্তি। (সূত্র: যুগান্তর)
কক্সবাজারের টেকনাফে সোনার কানের দুলের জন্য এক শিশুকে খুন করে তার দূর সম্পর্কের মামা সেলিম। হত্যার পর শিশুটির লাশ গভীর পাহাড়ে ফেলে দেন তিনি। (সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন)
একটি স্বর্ণের চেইনের জন্য মুন্সিগঞ্জে তুর্কি নামের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করে তার প্রতিবেশী। খতনা উপলক্ষে বাবা তাকে চেইনটি দিয়েছিলেন। তিন দিন পরে গোবরের স্তূপ থেকে তুর্কির গলিত লাশ পাওয়া যায়। (সূত্র: সমকাল)
সোনার পরিমাণ এক আনা হোক আর ১২ আনা; গয়নার জন্য শিশুরা অপহরণ হচ্ছে, খুন হচ্ছে, গুম হচ্ছে। উদ্ধার হচ্ছে শিশুদের বস্তাবন্দী লাশ, গলিত লাশ, কখনো কখনো হদিসই মিলছে না।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেন, দেশের সর্বত্র সুরক্ষা বলয় ভেঙে গেছে। পাশাপাশি বিরাজ করছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এ সুযোগটিই নিচ্ছে অপরাধীরা। রাষ্ট্র ও প্রশাসনের দায়িত্ব সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ বা প্রতিশ্রুতিশীল নয়।
তবে কি এ ধরনের হত্যা চলতেই থাকবে? স্বর্ণালংকারের কাছে হেরে যাবে তাজা তাজা কচি প্রাণ? একটু ছোট উদ্যোগ অন্তত এ ক্ষেত্রে শিশুদের রক্ষা করতে পারবে। আর তা হচ্ছে শিশুদের সোনার গয়না না পরানো। একটু কৌশলী হতে দোষের কী!
স্বর্ণালংকার কী শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় কোনো অনুষঙ্গ? শিশুরা প্রকৃতিগতভাবেই সুন্দর। সরলতা, কোমলতাই তাদের অলংকার।
স্বর্ণালংকার না পরানোর পরামর্শ হয়তো কোনো যৌক্তিক সমাধান নয়। চোরের ওপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়ার মতো সমাধান। কিন্তু অভিভাবকদের ভাবতে হবে, সাজসজ্জা না জীবন বড়? সোনার গয়না না পরলে যদি একটি শিশু প্রাণে বেঁচে থাকে, বড় হওয়ার সুযোগ পায়—তা হলে তা-ই করা উচিত।