সাতক্ষীরায় ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে কোচিং বাণিজ্য - দৈনিকশিক্ষা

সাতক্ষীরায় ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে কোচিং বাণিজ্য

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি |

সাতক্ষীরায় সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা সকাল-সন্ধ্যায় বাসায় একাধিক ব্যাচে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। প্রতি ব্যাচে পড়ানো হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে। নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত।

কাগজে-কলমে নীতিমালা থাকলেও সরকারি নজরদারি না থাকায় দিনের পর দিন ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন শিক্ষকরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলাকালে প্রাইভেট ব্যাচে পড়ার সময় নির্ধারণ করার কারণে প্রতিষ্ঠিনগুলোয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রতি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ বিভাগের সব জেলায় সকাল সাতটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। নির্দেশ মোতাবেক গত ২৯ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলার আইন শৃংখলা কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচিত হয়। ওই সভা থেকে কোচিং সেন্টারগুলোকে নিয়ম মাফিক পরিচালনা করার র্নিদেশ দেওয়া হয়। শহরে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারগুলো নির্দেশনা মেনে সকাল সাতটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইতোমধ্যে কোচিং সেন্টারগুলো ব্যাচের সময়সূচি পরিবর্তনও করেছে। কিন্তু কোচিং সেন্টারগুলো নির্দেশনা মানলেও ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া নিয়ে বাসায় প্রাইভেট পড়ানো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে একাধিক ব্যাচে সকাল-সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। কোন কোন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে যেতে নিরুৎসাহিত করছেন বলেও অভিযোগ আছে।

নীতিমালা অনুসারে কোচিং সেন্টারের নামে বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং পরিচালনা করা যাবে না। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতন ভাতাদি স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন একধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্ত ও চূড়ান্ত বরখাস্ত ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা। এমনকি কোচিং বাণিজ্যে জড়িত কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে অথবা ব্যবস্থা না নিলে সরকার পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি ও অধিভুক্তি বাতিল করতে পারে।

এছাড়া সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা) বিধিমালার অধীনে ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

কিন্তু নীতিমালার তোয়াক্কা না করে সাতক্ষীরার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ এলাকা, সরকারি মহিলা কলেজ এলাকা, সিটি কলেজ এলাকা, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা, কাটিয়া, মুনজিতপুর, মুন্সিপাড়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। স্বনামধন্য এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা দিনের পর দিন নীতিমালার তোয়াক্কা না করলেও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে প্রাইভেট পড়ানো এসব শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ রোডে অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিনের বাসার পাশে সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল বিভাগের শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ, সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মোস্তফিজুর বাবুল, পুরাতন সমাজসেবা অফিসের পাশে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের রসায়ন শিক্ষক কাজী আসাদ, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের লেকের ধারে সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের প্রদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ রোডে আগরদাড়ি কামিল মাদরাসার শিক্ষক ইংলিশ প্যারাডাইস কোচিং সেন্টারের পরিচালক ও মালিক হাবিবুর রহমান, সরকারি কলেজ রোডে রাবেয়া ক্লিনিকের পাশের গলি দিয়ে শেষ বাড়িতে জীববিজ্ঞানের শিক্ষক গৌরপদ ম-ল, আনন্দপাড়ার পুলিশ লাইন স্কুলের শিক্ষক (গণিত ও বিজ্ঞান) উজ্জ্বল ব্যানার্জি, পুরাতন সমাজসেবা অফিসের পাশে শহীদ স্মৃতি কলেজের বাংলা শিক্ষক তপন ঘোষ, সরকারি মহিলা কলেজ-সংলগ্ন এলাকায় শহীদ স্মৃতি কলেজের শিক্ষক ফরিজুল ইসলাম, করিম মেসের পাশের গলিতে দিবা নৈশ কলেজের ইংরেজি শিক্ষক প্রদীপ কুমার বিশ্বাস।

কাটিয়া শহীদ রিমু মঞ্জিলের সামনে শহীদ স্মৃতি কলেজের উপাধ্যক্ষ দীপক কুমার ম-ল, কাটিয়া রিমু মঞ্জিলের পেছনে আইসিটি শিক্ষক মাহবুবুর রহমান, সরকারি কলেজ রোডে গ্রামীণ টাওয়ারের পাশে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, মুন্সীপাড়া মসজিদের পাশে ছফুরননেছা মহিলা কলেজের গণিতের শিক্ষক ভোলানাথ ম-ল, সরকারি কলেজ রোডে গ্রামীণ টাওয়ারের সামনে সিটি কলেজের গণিতের শিক্ষক শামসুর রহমান স্বপন, সরকারি কলেজ রোডে বাংলা শিক্ষক মোশারফ হোসেন, সরকারি কলেজ মোড় থেকে ঝুটিতলা রোডে ঝাউডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক মনিরুজ্জামান।

কলেজ রোডে ঝাউডাঙ্গা কলেজের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক পরমেকা ঘরামী, মুন্সীপাড়া প্রাইমারি স্কুলের পেছনে খালেদা জিয়া ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি শিক্ষক সদানন্দ, রসুলপুর মন্দিরের পাশে ব্যবস্থাপনা শিক্ষক তরুণ কুমার সানা, কদমতলায় সিটি কলেজের শিক্ষক অরুণ কুমার ম-ল, এসপির বাংলোর সামনের গলির ভেতরে সিটি কলেজের ইংরেজি শিক্ষক কামরুজ্জামান স্বপন, সিটি কলেজের সামনে ইংরেজি শিক্ষক আলতামুন, কলেজ মোড়ে ইংরেজির শিক্ষক আব্দুল আজিজ, গণিতের শিক্ষক নির্মল কুমার, ভালুকা চাঁদপুর কলেজের ইংরেজির শিক্ষক তাসনিয়া, দিবা নৈশ কলেজের পরিসংখ্যানের শিক্ষক তাপস, সুধাংকর, মুন্সীপাড়ার খিরোদ, দিবা নৈশ কলেজের হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক মো. খোকন, অ্যাকাউন্টিং টিচিং হোমের আমিনুর রহমান।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষককে নীতিমালা মেনে পড়ানোর জন্য নোটিস করা আছে। আমার জানা মতে কেউ নীতিমালার বাইরে পড়ায় না। তারপরও যদি পড়ায় জানতে পারলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে শিক্ষকদের সতর্ক করে নোটিস দেওয়া হয়েছে। নিয়ম ভেঙে যদি কোন শিক্ষক পড়ায় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘বিধি অনুসারে একজন শিক্ষক অন্য প্রতিষ্ঠানের দশজন শিক্ষার্থীকে পড়াতে পারবেন। এর বেশি শিক্ষার্থী পড়ালে অথবা নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পড়ালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুদেব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমার জানা মতে কেউ কলেজের বাইরে পড়ায় না। যদি পড়ায় তার দায় তার নিজের।’

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘নীতিমালার বাইরে যেয়ে পড়ানোর কোনও সুযোগ নেই। আমরা বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষকমন্ডলী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করা হবে। তারপর আমরা বিষয়টি নিয়ে অভিযানে নামব।

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039718151092529