সাত বছরে উচ্চশিক্ষায় অগ্রগতি - Dainikshiksha

সাত বছরে উচ্চশিক্ষায় অগ্রগতি

মিল্টন বিশ্বাস |

milton bগত ১৮ জানুয়ারি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, লেখক-শিল্পী ও অন্য অনেক অতিথির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতাদের পিঠা উৎসব ও নৈশভোজে নিমন্ত্রণ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংকট উত্তরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। বিশ্বের এমন প্রধানমন্ত্রী আছেন কি না জানি না, যিনি মাদুরে বসে গণভবনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কলাকুশলীদের সঙ্গে হূদ্যতা দেখান অথবা অতিথিদের অনুরোধে সেলফি তুলতে দেন নির্বিকার চিত্তে। নতুন কেউ পরিচিত হতে চাইলে হাসিমুখে পরিচয় জেনে নেন। আবার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মান দেখানোর জন্য দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা ব্যয় করেন। অতিথিদের সঙ্গে একই টেবিলে বসে ভোজনে অংশগ্রহণ করেন। ওই দিন বিকেল-সন্ধ্যা ও রাতের প্রথম পর্বে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা দেখে উপস্থিত সুধীরা আপ্লুত হয়েছেন। আর ফেডারেশনের নেতারা তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসলে তিনি মনোযোগ সহকারে কথা শুনেছেন। সমস্যার গভীরতা বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়ে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ এর আগের দিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অভিযোগ ছিল প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না। কিংবা তিনি শিক্ষকদের বিসিএস দিয়ে সচিব হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই শিক্ষকরা মনঃকষ্টে আছেন। কিন্তু ১৮ তারিখ একটি আন্তরিক পরিবেশে সারা দেশের মানুষ দেখল প্রধানমন্ত্রী কতটা নিবেদিত সংকট উত্তরণে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশে কেবল নয়, পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য অনিবার্য হয়ে উঠেছে। মানবতা, জনসম্পৃক্ততা, দৃঢ় প্রত্যয় ও আদর্শবাদিতা তাঁকে ক্রমান্বয়ে মহিমান্বিত করে তুলছে। তিনি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংকট মোচন করে তরুণ শিক্ষার্থীদেরও মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা তৃতীয় দফা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তারও দুই বছর অতিবাহিত হলো। দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই পিলখানা হত্যাযজ্ঞসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সচেষ্ট হতে হয় তাঁর মন্ত্রিপরিষদকে। তবে ক্ষমতায় আসার পর দেশের উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ জনগণের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রশংসনীয় হয়েছে তার মধ্যে শিক্ষা খাতে ঐতিহাসিক সংস্কার ও যুগান্তকারী পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্য আকাশচুম্বী। ৬ জানুয়ারি (২০১৬) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বর্ণপদক বিতরণের সময় শেখ হাসিনা প্রতিটি জেলায় সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়েছিলেন। তাঁর কথার বাস্তব রূপ দেখা গেল চলতি মাসেই আরো ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন প্রদানের মধ্য দিয়ে। এর আগে ২০১১ সালে ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী মহাজোট সরকার ও বর্তমান মেয়াদ মিলে শেখ হাসিনা একটানা সাত বছর ক্ষমতায় অতিবাহিত করেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনও এই সময় অতিক্রম করছে। গত সাত বছরে সরকারের সফল ও সার্থক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত রয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রশাসনিক ও সরকারি পদক্ষেপের সাফল্যগাথা আমাদের অনেকেরই অজানা। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপিত মুক্তবুদ্ধির পরিচর্যা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে বিদ্যাচর্চার নিরাপদ কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। বর্তমানে পুরনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। নতুনগুলোতে রয়েছে আর্থিক দুর্বলতা ও শিক্ষক সংকট।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যোগ্য উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগের কাজ করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৬ সালের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় জোট সরকারের আমলের দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী উপাচার্যদের সরে যেতে হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদের পরিচালনা শুরু হলে। বর্তমানে দেশে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ৯০টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সুবিধার জন্য রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মিলিটারি ও নেভাল একাডেমিসহ সামরিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়েছে। ঢাকার টেক্সটাইল কলেজকে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহ ও শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের ‘ভিশন ২০২১’ অনুসারে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরের তালিবাবাদে একটি ‘ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’ স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করা হয়েছে।

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। সংকট তৈরি করা হয়েছিল অবৈধ নিয়োগপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে। অধিভুক্ত কলেজগুলোকে দুর্নীতির আখড়া বানানো হয়েছিল। এমনকি সে সময়ের একজন সাবেক উপাচার্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে বর্তমান সরকারের আমলে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করে এর কার্যকারিতা ও মানবৃদ্ধির কাজ চলছে। সময়মতো পরীক্ষা গ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে অধিভুক্ত কলেজগুলোয়।

গত সাত বছরে দেশের উচ্চশিক্ষা খাতে গবেষণায় অনেক বেশি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। গবেষণার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সংযুক্তি একটি অনিবার্য দিক। আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক যোগাযোগে উচ্চ গতিসম্পন্ন ডাটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এ সরকারের আমলেই ইউজিসি ও পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশের মধ্যে কম্পানিটির দেশব্যাপী বিস্তৃত অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ২০ বছরব্যাপী ব্যবহার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির আবেদনপত্র ও ফি গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশিত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সাত বছরে উচ্চশিক্ষাঙ্গনের অশান্ত পরিস্থিতিকে দ্রুত স্বাভাবিক করে তোলা হয়েছে। এই স্বাভাবিক পরিস্থিতি বহাল রাখার জন্য ১৮ জানুয়ারি শেখ হাসিনা পুনরায় তাঁর সদিচ্ছা প্রকাশ করলেন। বর্তমান সরকার ও ফেডারেশনের নেতাদের ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম শ্রেণির বিদ্যাপীঠে পরিণত করবে বলে আমরা মনে করি।

লেখক : মিল্টন বিশ্বাস, অধ্যাপক ও পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060708522796631