স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ৩৭ বছরে সমাবর্তন হয়েছে মাত্র ৩ বার। সর্বশেষ ২০০২ সালের ২৮ মার্চ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর থেকে দীর্ঘ ১৫ বছরে আর কোনো সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বারবার সমাবর্তনের দাবি জানানো হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাতে ১৫টি বছর কাটিয়ে দিয়েছে। যথাসময়ে সমাবর্তন না হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে প্রদত্ত সনদপত্রকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভুয়া সনদপত্র বলে আখ্যায়িত করছে। ফলে সাময়িকভাবে প্রদত্ত সনদপত্র নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
সময়মতো সমাবর্তন না হওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবরই নানা সমস্যার কথা বলে বিষয়টি উপেক্ষা করে আসছে। কথিত এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে_ ক্যাম্পাসের অস্থিতিশীল পরিবেশ, সমাবর্তনের বিরাট ব্যয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেতে বিলম্ব, আচার্য উপস্থিতির ব্যাপারে নিশ্চিয়তা না পাওয়া ইত্যাদি।
এদিকে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মূল সনদপত্রের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের সাময়িক সনদপত্র প্রদান করা হচ্ছে। আর এ সনদপত্র নিয়ে বিপাকে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। চাকরির আবেদনপত্রে এ অস্থায়ী সনদপত্র সংযুক্ত করলে সনদপত্রের সত্যতা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের। সন্দেহ দূর করতে ওই সনদপত্র আবার ভেরিফিকেশন করতে হয়। ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আলী আক্কাস বলেন, ‘আমি ইবি থেকে দেওয়া প্রভিশনাল সার্টিফিকেট (সাময়িক সনদপত্র) নিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে চাকরির আবেদন করতে গেলে সেখানে আমাকে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এ ছাড়া আমার অনেক বন্ধুও এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।’ এদিকে এ সনদপত্র নিম্নমানের কাগজ দিয়ে তৈরি বলে অভিযোগ রয়েছে। নিম্নমানের এ সনদপত্র থেকে লেখা মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে আজাদ বলেন, ‘সনদপত্রের কাগজের মান আরও উন্নত হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে নোট দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে সমাবর্তন না হওয়ার কারণে ক্যাম্পাসের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সমাবর্তন হওয়ার মাধ্যমে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ফুটে ওঠে। সমাবর্তন হলো শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। সেই মিলনমেলা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ও একাডেমিক উন্নয়নের জন্য নিয়মিত সমাবর্তন হওয়া জরুরি।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘সমাবর্তনের জন্য আমরা ইতিমধ্যে আবেদন করেছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলেই যত দ্রুত সম্ভব সমাবর্তনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।’