সিলেটে উপপরিচালক সন্তুষ্ট হলেই মেলে এমপিও - দৈনিকশিক্ষা

সিলেটে উপপরিচালক সন্তুষ্ট হলেই মেলে এমপিও

চয়ন চৌধুরী |

সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলা সদরের বেসরকারি একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক বছরখানেক আগে একসঙ্গে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে দু’জনের এমপিও হলেও আটকে যান একজন। তিনি এরপর তিনবার আবেদন করলেও ত্রুটির কথা বলে বাতিল করে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় ওই শিক্ষক বাধ্য হয়ে সিলেট অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের এক কর্মচারীর সহায়তায় শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে রফাদফা করে এমপিওভুক্ত হন। একইভাবে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে দু’জন শিক্ষক একই সঙ্গে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেন। তাদের একজন শুরুতেই মাউশির ওই শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এমপিওভুক্ত হয়ে যান। বাদ পড়েন অন্যজন। বাদপড়া শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একসঙ্গে একই প্রক্রিয়ায় অনলাইনে আবেদন করে আমারটা না হওয়ায় বিস্মিত হয়েছি। পরে জানতে পারি, এমপিওভুক্ত হতে হলে মাউশির শীর্ষ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে হবে। পরে অন্য উপায় না থাকায় দেনদরবার করে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছি।’

মাধ্যমিক পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি সহজ

করতে মাউশির আঞ্চলিক অফিসে অনলাইনে আবেদনসহ অন্যসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়। এতে শিক্ষকদের সুবিধা হওয়ার কথা থাকলেও সিলেট অঞ্চলের কয়েকশ’ বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা উল্টো ভোগান্তিতে পড়েছেন। এমপিওভুক্ত হতে শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে গড়ে ওঠে একটি সিন্ডিকেট, যার মূলে রয়েছেন মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবির আহাম্মদ। নূ্যনতম ২০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করা গেলে তবেই মেলে এমপিওভুক্তি। উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সুপারিশও আমলে নেন না তিনি।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি সিলেট জেলা শাখার সদস্য সচিব আবদুল মালিক রাজু বলেন, ‘মাউশির ডিডি (উপপরিচালক) দীর্ঘদিন সিলেটে থাকায় একটি সিন্ডিকেট গড়ে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিসহ নানা বিষয়ে হয়রানি করছেন। সমান যোগ্যতার দুই বা ততোধিক শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে আবেদন করলে একজনকে করে অন্যদের বাদ দেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।’

সিলেট বিভাগের ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ২৫ জন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমপিওভুক্ত হতে তারা প্রত্যেকে হয়রানি ও ঘুষ-বাণিজ্যের শিকার হয়েছেন। এই শিক্ষকদের প্রত্যেকের অভিযোগ মাউশির সিলেট অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবির আহাম্মদের বিরুদ্ধে। শিক্ষামন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে আট বছর ধরে তিনি নানাভাবে শিক্ষকদের হয়রানি করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বহুবার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলেও তা আর হয়নি। ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি সিলেট জেলা শাখার পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে উপপরিচালক জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া মাউশির মহাপরিচালকের কাছেও পৃথক অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তেই সব আটকে আছে।

উপপরিচালকের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পাওয়ার পরই জাহাঙ্গীর সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্যত্র বদলি করে পছন্দের লোক সেখানে এনে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। অফিসের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, অফিস সহকারী থেকে শুরু করে নিজের গাড়িচালককেও এ কাজে ব্যবহার করেন তিনি।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘একজন সরকারি কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এত বছর একই জায়গায় কীভাবে থাকেন? দেশে মনে হয় এই পদের দায়িত্ব পালনের যোগ্য আর কোনো কর্মকর্তা নেই।’ তিনি বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে উপপরিচালক জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক শিক্ষকের স্বাক্ষরসংবলিত লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে মাউশির মহাপরিচালকের কাছে। তার পরও কিছু হচ্ছে না।

এমপিওভুক্তিসহ অন্যান্য বিষয়ে জাহাঙ্গীর কবির আহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সিলেটে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্নভাবে এমপিওভুক্তির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখানে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।’ সিন্ডিকেট গড়ে এমপিওসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন কিছু হচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষামন্ত্রী ও মাউশির মহাপরিচালকের কাছে শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, কারও কাজ না হওয়ায় হয়তো হতাশা থেকে তারা এমন করেছেন। তদন্ত প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘উপরমহল থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে সব সময় ব্যাখ্যা দিয়েছি।’

সৌজন্যে: সমকাল

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0095679759979248