সিলেবাস,অননুমোদিত বই এবং প্রাসঙ্গিক কথা - Dainikshiksha

সিলেবাস,অননুমোদিত বই এবং প্রাসঙ্গিক কথা

অলোক আচার্য্য |

লেখাপড়া এখন হয় সিলেবাস ভিত্তিক। সিলেবাস মানে কোন নির্দিষ্ট সময় কোন বইয়ের কতটুকু পড়তে হবে এবং পড়াতে হবে তার একটা সীমাবদ্ধতা। একটি শ্রেণিতে কি শেখানো হবে সেটাও এর আওতাভুক্ত। একটি নির্দিষ্ট সময়ের শিক্ষা কার্যক্রম সমাপ্তির সিলেবাস আছে কিন্তু জ্ঞানের নেই। জ্ঞানের রাজ্যে সবাই শিশু।

তাই শিক্ষা কার্যক্রমে এই সিলেবাসভিত্তিক পড়ালেখার পাশাপাশি মুক্ত জ্ঞানের চর্চার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নেয়া উচিত। যেখানে সহশিক্ষাকার্যক্রমকে আরও বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। জ্ঞানের বহুমুখী বিকাশ সাধন এবং পাঠে মনোযোগ বৃদ্ধিই এর উদ্দেশ্য। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হয় না। ফলে জ্ঞানের রাজ্য বিকশিত হওয়ার সুযোগ হয় না। জ্ঞান থেকে যায় বইয়ের পাতায়। অথচ জ্ঞানের ধর্মই বিকাশ সাধন। সিলেবাসের বাইরে পড়ার বা পড়ানোর আগ্রহ নেই। প্রয়োজনীয়তা নেই বললে ভুল হবে। প্রয়োজন আছে তবে আগ্রহের অভাব।

সিলেবাসের ভেতর পড়তে পড়তে আমাদের সন্তানরা জ্ঞানের অংশ খেকেই পিছিয়ে পরছে। আমার এক পরিচিত সাংবাদিক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন বছর পাঁচেক আগে জিপিএ ফাইভ পাওয়া এক ছাত্রকে বৃষ্টি হয় এর ট্রান্সলেশন জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দিয়েছিল জধরহ রং. এখন সে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল থেকে পাস করে এসে ডাক্তার হয়েছে। আজ লেখাপড়া করার সুযোগ অনেক। সরকারি কলেজে চান্স হয়নি তো কি হয়েছে। কিন্তু সে এই বিষয়ে কতটুকু দক্ষ হয়েছে সেটাই প্রশ্ন। সে কতটুকু ভাল ডাক্তার হয়েছে সেটা তার সেবা দেয়ার উপর নির্ভর করবে। সেই স্ট্যাটাসে আরও কিছু কথা ছিল।

বৃষ্টি হয় এর ইংরেজি অনুবাদ না করতে পারলে ভাল ডাক্তার হওয়া যাবে না আমার কাছে এরকমটাও মনে হয় না। আবার একজন ভাল ফলাফল করা ছাত্র এই সহজ অনুবাদ করতে পারবে না এটাও মানতে পারি না। এর আগে আই এম জিপিএ ফাইভ সাক্ষাৎকাটি নিয়ে দেশজুড়ে বেশ আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। লেখার শুরুতে সেই ছাত্র অনুবাদটি না পেরে বলেছিল আমাদের সিলেবাসে ট্রান্সলেশন নেই। এখন সরাসরি ট্রান্সলেসন শিখতে হয় না খুবই সত্যি কথা। তবে তাকে কেউ ট্রান্সেলেসন শিখতে নিষেধও করেনি।

সিলেবাসের একটু বাইরে গিয়ে সে এগুলো শিখতে পারতো। এই হলো অবস্থা। সিলেবাসের বাইরের জগত নিয়ে এদের কোন আগ্রহ নেই। অবশ্য থাকার কথাও না। কারণ সারাক্ষণ যাদের অভিভাবক িিজপিএ ফাইভ পেতেই হবে এরকম মানসিকতা নিয়ে সন্তানকে স্কুল করায় কোচিং করায় তার কাছ থেকে এর থেকে ভাল উত্তর আশা করা যায় না। পরিবারের একটাই কথা তোমাকে জিপিএ ফাইভ পেতে হবে।

তাতে যদি সারাক্ষণ ঐ সিলেবাসের বই মুখস্থ করে গিলে ফেলতে হয় তাতে কোন অসুবিধা নেই। অসুবিধা আছে জিপিএ ফাইভ না পেলে। অনেক অভিভাবকের মান সম্মান নাকি ধুলায় মিশে যায়। অসুবিধা কেবল সিলেবাসের বাইরের পড়া নিয়ে। পাঠ্য বইয়ের বাইরের একটা অংশই যেখানে সারা বছরে শেষ হয় না সেখানে পাঠ্য বইয়ের বাইরের বই পড়ার আশা করাটা বোকামি।

সেক্ষেত্রে অভিভাবকরাই এখনও প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করেন। কেউ যদি বাড়িতে গল্পের বই পড়ে তার বাবা মা তাকে সেটা পড়তে নিষেধ করে। তাকে অনেক সময়ই কটূ কথা শুনতে হয়। অনেকেই আমাকে বলেছে গল্পের বই পড়লে তার মা বাবা রাগ করে। কেন রাগ করে জানিনা।

তাদের মাথার ভেতর মনে হয় ঢুকে গেছে যে পাঠ্য বইয়ের সাথে অন্য বই পড়া যাবে না। গল্পের বই পড়লে তো আর ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করা যাবে না। খামোখা সময় নষ্ট! পড়লে ফলাফল খারাপ হবে। মানে জিপিএ ফাইভ পাওয়া যাবে না। খুব কম পরিবারেই বিষয়টাকে উৎসাহ দেওয়া হয়।

তাছাড়া যদি সেই ছাত্রছাত্রী লেখাপড়ায় একটু দুর্বল হয় তাহলে তো কথাই নেই। কথায় কথায় তাকে সেই অতিরিক্ত বই পড়ার জন্য টিপ্পনি শুনতে হয়। এমনকি শিক্ষকদের কাছ থেকে একই অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। সেটাও যে সাধারণ জ্ঞানের একটা অংশ সেটা আজও ভাবতে শিখিনি। বোধ করি সেটাই জ্ঞান রাজ্যের সবথেকে বড় অংশ। পাঠ্যবইকেই আমার জ্ঞান রাজ্যের ক্ষুদ্র একটা অংশ বলে মনে হয়। কারণ বর্তমানে এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরীক্ষায় ভালো ফল করা। তারপর চাকরি করা। তাও আবার এক বিভাগে পড়ালেখা শেষে ভিন্ন একটি বষয় ভিত্তিক চাকরি করা। বাইরের বই সেখানে গৌণ।

লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক, পাবনা।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064008235931396