সুবিধার ওপর চেপে বসছে অসুবিধা - দৈনিকশিক্ষা

সুবিধার ওপর চেপে বসছে অসুবিধা

আনতারা তাবাসসুম পিউলি |

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্মত শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তিন সেমিস্টার থেকে দুই সেমিস্টার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত ২০১৮ সালে কার্যকরের নির্দেশ  দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বছরে এক সেমিস্টার কমিয়ে দুই সেমিস্টার-উপযোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড সিলেবাস ও কারিকুলাম’ও তৈরি করে দেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের সিংহভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বছরে তিন সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করে চলে। এর ফলে যে খুব ক্ষতি হচ্ছে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। বরং বিভিন্ন দিক বিবেচনা করলে বলা যায়, বছরে তিন সেমিস্টার পদ্ধতিই উত্তম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝারি আয় বা উচ্চ আয় এমনকি কিছুসংখ্যক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান লেখাপড়া করছে। বছরে তিন সেমিস্টার পদ্ধতির ফলে যার পক্ষে বেশি বিষয় নিয়ে পড়া সম্ভব, সে তার সুবিধামতো সংখ্যক বিষয়ে অধ্যয়ন করতে পারছে। তিন সেমিস্টার পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থীর প্রতি সেমিস্টারে সর্বনিম্ন নয় ক্রেডিটের (তিনটি কোর্স) কোর্স করতে হয়।

কিন্তু দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে আনুপাতিকহারে পনের ক্রেডিট (পাঁচটি কোর্স) করতে হবে। দেখা যাচ্ছে যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রেডিট ফি ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারই আর্থিকভাবে সচ্ছল নন। ফলে এককালীন অতিরিক্ত ক্রেডিট ফি বাধ্যতামূলক চাপিয়ে দেওয়া হলে শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের জন্য আর্থিক চাপ ও হতাশা বাড়াবে বৈ কমবে না। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা শিক্ষার খরচ নিজেই বহন করে। এককালীন অতিরিক্ত ক্রেডিট ফি জমা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। ফলশ্রুতিতে, তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে অথবা ক্রেডিট ফি’র ব্যবস্থা করতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। পরিবর্তন যত মঙ্গলের জন্যই আনা হোক না কেন, এর বিপরীত চাপ শিক্ষার্থীদের ওপর দিয়েই যাবে এক্ষেত্রে। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে এই সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তা কতদিন বহাল থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই!

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ এবং এই পদ্ধতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্বাভাবিক ও সহজ। কারণ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অস্বাভাবিক ক্রেডিট ফি বহন করতে হয় না। তাই যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হোক না কেন তা আর্থিক ও সামগ্রিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী, যার পড়াশোনায় যৌক্তিক কোনো কারণে বিরতি এসেছে, সে তার পড়াশোনা তিন সেমিস্টারের যেকোনো একটি সেমিস্টার থেকে শুরু করার জন্য বছরে তিনবার সুযোগ পাচ্ছে। অনেক পিছিয়ে যাওয়া নারী-পুরুষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের পড়াশোনা পুনরায় শুরু করার সাহস করছেন।

কিন্তু বছরে দুই সেমিস্টার হলে সব দিক থেকে তাদের ভবিষ্যত্ অনিশ্চতায় পড়বে। শেষবর্ষে হয়তো মাত্র দুটি বিষয়ের জন্য ছয় মাস সময় বেশি ব্যয় হবে। তাছাড়া, শোনা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোন বিষয় অধ্যয়ন করবে আর কোনটি করবে না, তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে নির্ধারণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো উন্মুক্ত শিক্ষা চর্চার পীঠস্থান। এভাবে ইউজিসির সিলেবাস নির্ধারণ উন্মুক্ত শিক্ষাচর্চার ধারণাকে ব্যাহত করে। বর্তমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপদ্ধতি অনুযায়ী কিছু বিষয় (কোর্স) বাধ্যতামূলক, বাকি বিষয় শিক্ষার্থীরা তাদের ধারণক্ষমতা ও পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেয়। এতে লেখাপড়ায় বৈচিত্র্য আসে এবং সৃজনশীল মননের বিকাশ ঘটে। দীর্ঘ সময় ও শ্রম দিয়ে সকল শিক্ষার্থীর সার্বিক অবস্থা লক্ষ্য রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব নিয়ন্ত্রণ করছেন, তাই কখনোই উচিত নয় সিলেবাস নির্ধারণে ইউজিসির হস্তক্ষেপ করা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা থেকেও বাংলাদেশের সদ্য প্রতিষ্ঠিত সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো সমাধান করা প্রয়োজন। তাছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলভাবে পরিচালিত সেমিস্টার পদ্ধতির পরিবর্তন করার চেয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি তালিকা নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি, স্থায়ী ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নিশ্চিত করা, ক্রেডিট ফি গ্রহণযোগ্যহারে নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করা বেশি প্রয়োজন।

লেখক : শিক্ষার্থী, ব্র্যাক স্কুল অব ল,

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035538673400879