আমাদের দেশে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষাব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতি চালু রয়েছে। অনেকের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান ছিল স্পষ্ট। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে এ পদ্ধতি কঠিন মনে হলেও ধীরে ধীরে তা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে নয় বরং বোর্ডের বইগুলোর প্রতিটি অধ্যায় রপ্ত করা ও সহায়িকা গাইডের সহায়তায় কীভাবে প্রশ্নের সহজ সমাধান খুঁজে নিতে হবে তা-ই মূল বিষয়।
কিছুদিন আগে যখন সৃজনশীল ৬০ থেকে ৭০ ও এমসিকিউ ৪০ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হলো তখন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আন্দোলন ও প্রতিবাদের ঝড় উঠল। তবে অনেকেই মনে করেন, এমসিকিউ-তে যেভাবে পূর্ণ নম্বর পাওয়া সম্ভব সৃজনশীলেও তার ব্যতিক্রম হবে না, যদি যথার্থ উত্তরটা শিক্ষার্থীরা বুঝে লিখতে পারে। বানিয়ে বানিয়ে লেখার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। পরীক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তন হবে—এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। স্থির থাকতে হবে লক্ষ্যে।
সাড়ে তিন লাখ মাধ্যমিক শিক্ষকের জন্য ৬০ লাখ শিক্ষক সহায়িকা গাইড পৌঁছে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। তাতে শিক্ষকগণ উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও সৃজিত হবে। বার বারই আমরা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের পাঠদানের দুর্বলতা বা সফলতার কথা শুনে আসছি। সম্মানিত শিক্ষকগণ যদি নিজেদের আয়ত্ত করা বিষয়গুলোকে বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন তবে ভালো-মন্দ প্রতিটি শিক্ষার্থী সমভাবে উপকৃত হবে এবং যাদের অপারগতা আছে তারা কোচিং বাণিজ্যের বিড়ম্বনা থেকে সামান্য হলেও রক্ষা পাবে।
একজন শিক্ষকের নিজেকে প্রমাণ করার উপযুক্ত মাধ্যম হচ্ছে শ্রেণিকক্ষ। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সামঞ্জস্যপূর্ণ মনোভাবেই পারে প্রতিটি শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করতে। শিক্ষকদের সঠিক দিক নির্দেশনাই শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল পদ্ধতির ভয়কে দূর করবে ।
অন্যদিকে শিক্ষকদের সীমাবদ্ধতার কথা বলতে হয়। এমপিওভুক্ত একজন শিক্ষকের মানসম্মত ও ভাবনাহীন জীবন কিংবা ছেলেমেয়েদের ভালো মানের স্কুলে পড়ানোর চিন্তা বিলাসিতা মাত্র। অন্যদিকে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তো থেকে যাচ্ছেন অন্তরালেই। তারা রূঢ় বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে চাপা কষ্টে কোনো মতে পথ চলেছেন লেংচে লেংচে। অপেক্ষার প্রহর গুনছেন—হয়তো কোনো একদিন তারাও হবেন এমপিওভুক্ত। তাই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যতবারই পরিবর্তন হোক না কেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের কথা যতোই বলা হোক না কেন, তার আগে ভাবতে হবে শিক্ষকদের জীবন মান উন্নয়নের কথা। যদি তা-ই না হয়—আমাদের মেধাবী সন্তানেরা ভবিষ্যতে আর যাই হোক শিক্ষক হতে চাইবে না। আর মেধাবীরা যদি এ পেশায় আসার অনুপ্রেরণা হারায় তবে আগামী প্রজন্ম কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।