উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করে বখাটের হামলার শিকার হলেও মনোবল হারাননি যমজ দুই বোন ফারিহা হাবীব মীম ও আসওয়াদ হাবীব জিম। তারা বলেছেন, ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা ঘটলে প্রতিবাদ করবেন। এর আগেও তারা অনেকবার রাস্তায় বখাটেদের রুখে দিয়েছেন। স্কুলে পড়ার সময় বান্ধবীদের নিয়ে একটি দলই গঠন করেছিলেন; যারা সব ধরনের হয়রানির ঘটনা দলবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মিরপুরের পূর্ব মণিপুর এলাকার বাসায় সমকালের সঙ্গে কথোপকথনে তারা এসব জানান। এদিকে আহত দুই বোনের চিকিৎসার খোঁজ নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ও স্থানীয় এমপিসহ অনেকেই। তারা সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি দু’জনের সাহসিকতাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
দুই বোনের পাশে শিক্ষামন্ত্রীসহ অনেকে :আহসান হাবীব জানান, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল ফোন করে তার দুই মেয়ের চিকিৎসার খোঁজ নিয়েছেন। তাদের সাহসকে সাধুবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজনীয় সব রকমের সহায়তা দেওয়া হবে। স্থানীয় এমপি আসলামুল হক ও শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনও ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন এবং সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। এর আগে বুধবার রাতে মিরপুরের বাসায় দুই বোনকে দেখতে যান নায়েম মহাপরিচালক অধ্যাপক হামিদুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।
মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়কের বিসিআইসি কলেজের সামনে বুধবার সকালে দুই বোনকে বেধড়ক পেটায় বখাটে জীবন করিম বাবু ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় লুৎফর রহমান বাবু নামে এক বখাটে গ্রেফতার হলেও মূল অভিযুক্ত রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সহপাঠীর ওপর হামলার প্রতিবাদ ও বাবুকে গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল কলেজের সামনে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বাবুর দোকান ‘অহনা ফাস্টফুড’ ভাংচুর করে।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শরীফুর রহমান বলেন, বাবুকে গ্রেফতারে সম্ভাব্য স্থানগুলোয় অভিযান চলছে। তার বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকেই সে ও তার মা লাইলী বেগম পলাতক।
আহত ফারিহা ও আসওয়াদ এখন তাদের মিরপুরের বাসায় রয়েছেন। তারা জানান, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল স্কুলে পড়ার সময় উত্ত্যক্ত করাসহ নানারকম হয়রানি ঠেকাতে পাঁচ-ছয়টি দল তৈরি করেছিলেন তারা। প্রতিটি দলে সাত-আটজন মেয়ে ছিল। তাদের কাজ ছিল, কেউ কোথাও উত্ত্যক্ত বা হয়রানির শিকার হলে দলবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করা। এভাবে তারা বেশ কয়েকবার বখাটেদের রুখে দিয়েছিলেন। সর্বশেষ এক মাস আগেও মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পেছনে তারা দুই বোন ও কয়েক সহপাঠী বখাটেদের উত্ত্যক্তের শিকার হন। তখনও তারা প্রতিবাদ করেন।
দুই বোন বলেন, সবাই সাহস করে প্রতিবাদ করলে বখাটেরা এমন বেপরোয়া হতে পারবে না। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, অনেক অপমান, এমনকি শ্লীলতাহানির শিকার হয়েও মেয়েরা চুপ করে থাকে। কারণ প্রতিবাদ করলে সেই মেয়েকেই উল্টো ‘খারাপ’ বলা হয়। এ ধরনের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।
ফারিহা হাবীব বলেন, তাদের মারধর করার পর বখাটে বাবু হুমকি দিয়ে বলেছে, ‘তোরা কীভাবে কলেজে পড়িস দেখে নেব। তোদের টিসি দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেব।’ বাবুর মাও তাদের গালি দিয়েছেন। এ সময় সেখানে অনেকেই উপস্থিত থাকলেও কেউ তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করেননি। পরে সহপাঠী মাহির ফয়সাল তিতাস গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। তিতাস জানান, তাকেও মারধর করেছে বাবু।
দুই বোনের অভিযোগ, বুধবার এ ঘটনার পর পর বাবার কাছে কল করার জন্য উপস্থিত অন্তত ২০ জনের কাছে তারা মোবাইল ফোন চেয়েছিলেন। তখন অনেকেই মোবাইল ফোনে ঘটনার ছবি তুলছিলেন। কিন্তু কেউই তাদের কল করতে দেননি। উল্টো কেউ কেউ বখাটের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, ‘ছেলেরা তো একটু এমন করেই। কী দরকার ছিল প্রতিবাদ করার।’
আহত দুই ছাত্রীর বাবা জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) প্রশিক্ষক আহসান হাবীব বলেন, সচেতনতা বাড়লে এ ধরনের ঘটনা কমবে। গতকাল বাংলা প্রথম পত্র ও মনোবিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা থাকলেও আহত হওয়ায় তার মেয়েরা কলেজে যেতে পারেননি বলেও জানান তিনি।
বিসিআইসি কলেজের এক শিক্ষার্থীর মা নাসিমা আক্তার বলেন, কলেজের সামনে থেকে অবৈধ দোকানগুলো তুলে দেওয়া উচিত। ওগুলোতেই বখাটেদের আড্ডা। স্থানটি মিনি বাস টার্মিনালে পরিণত হয়েছে। বাসগুলোও সরিয়ে দেওয়া দরকার।