বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের দুই প্রধান পরীক্ষকের ভুলের কারণে এবার এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করে ১ হাজার ১৪১ জন। এর মধ্যে ফেলের কষ্ট সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন মেধাবী শিক্ষার্থী সর্বজিৎ ঘোষ হৃদয়। ঘটনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত করে প্রমাণও পায় বোর্ড। শাস্তি হিসেবে এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) স্থগিতসহ সকল পরীক্ষার কার্যক্রম থেকে তাদের দূরে রাখা হয়।
কিন্তু মঙ্গলবার সেই বরিশাল বোর্ডের চেয়ারম্যানই দুই শিক্ষকের অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল আখ্যা দিয়ে বেতন ছাড়ের সুপারিশ করে আবেদন পত্র পাঠিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি)। এ ব্যাপারে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি দুই পরীক্ষকের দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদেরকে সকল পরীক্ষার কার্যক্রম থেকে বাদ দিয়েছি। এমপিও স্থগিত করা হয়েছে।
দোষী প্রমাণিত হওয়ার পরেও কেন বেতন ছাড়ের সুপারিশ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনারা আবেদন করেছে, আমি সুপারিশ করেছি। এখন সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়। কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সুপারিশ করা হয়েছে কিনা প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
ওই দুই পরীক্ষক হলেন- বরিশাল নগরীর ব্রজমোহন (বিএম) স্কুলের শিক্ষক জুরান চন্দ্র চক্রবর্তী ও বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি নিয়মিত যুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক বীরেন চক্রবর্তী। গত জুন মাস থেকে উভয়ের এমপিও স্থগিত রয়েছে। এরপর এমপিও ছাড়ের জন্য আবেদন করলে বোর্ড চেয়ারম্যান ফরোয়ার্ডিং দিয়ে মাউশিতে পাঠিয়েছেন।
বীরেন চক্রবর্তী বলেন, আমি তো অন্যায় করিনি, ভুল করেছি। ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছি। ভুল করলে তো আবেদন করতেই পারি। বোর্ডের চেয়ারম্যান স্যারের হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করার পর সে ফরোয়ার্ডিং দিয়েছে। আপনার কারণে একজন মেধাবী ছাত্র প্রাণ হারিয়েছে-এটা কোন্ ধরনের ভুল প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দিতে পারেননি।
গত ১১ই মে ২০১৬ সালের এসএসসির ফল প্রকাশিত হলে বরিশাল বোর্ডে হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ফেল করে। এতে শুরু হয় তোলপাড়। বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী উদয়ন স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সর্বজিৎ চার বিষয়ে জিপিএ-৫ পেলেও হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে ফেল করে।
বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে না পেরে ওইদিন দুপুরেই নগরীর প্যারারা রোডের বাসার পেছনের নির্মাণাধীন সাততলা ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে সে। এ ঘটনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করে ১৪ই মে নতুন করে ফল ঘোষণা করে। পুনর্মূল্যায়নে হিন্দুধর্মে জিপিএ-৫ পায় সর্বজিৎ।
এছাড়া সংশোধিত ফলে ১ হাজার ৯৯৪ জনের ফল পরিবর্তন হয়। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করে ১ হাজার ১৪১ জন। নতুন করে ১৫ জন জিপিএ-৫ পায়। ওই সময়ে প্রকাশিত ফল ভুল হওয়া প্রসঙ্গে বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেছিলেন, নৈর্ব্যক্তিক উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় দুই প্রধান পরীক্ষক ‘খ’ ও ‘গ’ সেট গুলিয়ে ফেলেন। তারা ‘খ’ সেট প্রশ্নের মূল্যায়ন করেন ‘গ’ সেটের উত্তরপত্রের মাধ্যমে আর ‘গ’ সেটের মূল্যায়ন করেন ‘খ’ সেটের উত্তরপত্রের মাধ্যমে। ফলে ‘খ’ সেটে যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের উত্তরের সঙ্গে প্রধান পরীক্ষকের ভুল উত্তরমালার সমন্বয় হয়নি।
ওই সময়ে তিনি নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেন, প্রযুক্তিগত ত্রুটি, প্রধান পরীক্ষকের অমনোযোগিতা এবং অদক্ষতার কারণে এটি হয়েছে।