হুমকি, ধমকিসহ বিভিন্ন বাধাঁর মুখে সেকায়েপ প্রকল্পভুক্ত অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষকরা। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা সবাই বিশ্বব্যাংকের ঋণের টাকায় চলা সেকায়েপের অধীনে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসায় পাঠদানের জন্য পদায়নকৃত। কিন্তু যেসব প্রতিষ্ঠানে তাদেরকে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ, অসহযোগীতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট স্কুল ও মাদ্রাসার অধিকাংশ ইংরেজি ও গণিত শিক্ষকরা চান না সেকায়েপ নিয়োগকৃত শিক্ষকরা ক্লাস নিক। অতিরিক্ত শিক্ষকদের কাছে যেন কেউ বাড়ী ভাড়া না দেন সেজন্য বাড়ীওয়ালাদেরও চোখ রাঙানি বা ক্ষেত্রমতে কুৎসা রটানোরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেকায়েপভুক্ত একাধিক শিক্ষক দৈনিকশিক্ষাডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার শিমুলিয়া সিদ্দিকীয়া আলিম মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষকের অসহযোগীতামূলক আচরণের প্রতিকার চেয়ে সেকায়েপ প্রকল্প পরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী একজন অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষক। ৬ই আগস্ট অভিযোগ জানানোর পর অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। অভিযোগে বলা হয়, আনোয়ার হোসেন নামের একজন ইবতেদায়ী শিক্ষক নানা কটুক্তি করেন সেকায়েপের একজন শিক্ষককে। ভুক্তভোগী শিক্ষক সেকায়েপের নজরুল ইসলাম ও হাবিবার নামের দুইজন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে তারা লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন। সেমতে অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
তবে, আজ বুধবার (১৬ আগস্ট) দৈনিকশিক্ষার এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক ড. মাহমুদুল হক বলেন, তিনি বৃহস্পতিবার অভিযোগটি পেয়েছেন। উপ-পরিচালক উম্মে হাবিবাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরিচালক দাবি করেন, তিনি শুনেছেন যে, দুই পক্ষেরই দোষ রয়েছে।
গজারিয়ার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: জাকির হোসেন দৈনিশিক্ষাডটকমকে বলেন, তিনি বিষয়টি জেনেছেন। সেকায়েপের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। বুধবার মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে বসবেন। অভিযোগকারীকেও ডাকা হয়েছে। মীমাংসার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে সেকায়েপের একজন উপ-পরিচালক দৈনিকশিক্ষাডটকমকে বলেন, একটা লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিচালক স্যারের নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিকশিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নীকারী বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ করে সেকায়েপ প্রকল্প চালু করেছে সরকার। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে এসব প্রকল্পে কর্মরত বি সি এস প্রশাসন ও সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা বিদেশে ঘোরা আর ঢাকায় ভালো পদায়নের একটা মাধ্যম হিসেবে এই প্রকল্পটিকে ব্যবহার করে থাকেন। আর বিশ্বব্যাংক ও এডিবি শিক্ষাখাতে কিছু দালাল বা নিজেদের লোক তৈরি করে চলছে। বিশ্বব্যাংকের বা এডিবির পছন্দের লোক হওয়ার আশায় অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন শিক্ষা ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা। তারা বছরের পর বছর এই প্রকল্পে চাকরি করছেন। এই প্রকল্পের একটি কম্পোনেন্ট অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষক।
ইংরেজি ও গণিতে অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষার্থীদের দূর্বলতা দূর করে পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফল করার দাবি করে আসলেও বাস্তবে এই প্রকল্পের অতিরিক্ত ক্লাসের কোনও সুফল পাওয়ার গবেষণা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। মুখে মুখে দাবি করা হয় সফল।
সেকায়েপের টাকা নিয়ে ক্লাস না নেয়ায় কদিন পর পর টাকা ফেরত দেয়ার চিঠি দেয়া হয় প্রকল্প থেকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দেয়া সেকায়েপের চিঠির কপি দৈনিকশিক্ষার হাতে রয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়নের ফলে পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে। আর বোর্ডের পরিসংখ্যানে দেয়া যায় বেশিরভাগ ফেল হয় ইংরেজি ও গণিতে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকার বই কেনাকাটায় বিশ্বব্যাংক ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মধ্যকার নানা অভিযোগের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
২০০৯ খ্রিস্টাব্দে সেসিপের দেশী-বিদেশী পরামর্শকদের সমন্বয়ে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির তথ্যমতে, সঠিকভাবে খাতা দেখার নির্দেশনা পেলেই পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার কমে। উদার হলে বাড়ে।