মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের জমিতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। গতকাল বুধবার তারা এসব কর্মসূচি পালন করে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি (১৭ আগস্ট) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. জহিরুল ইসলামের ১০ আগস্ট স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পান মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
চিঠিতে শিক্ষা অধিদপ্তরের মৌলভী-বাজার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় নির্মাণের জন্য মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের পুরোনো ছাত্র হোস্টেলের পূর্ব পাশের ২০ শতক ভূমি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং তা প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফেস্টুন-ব্যানার নিয়ে পথে নামে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, অভিভাবক ও শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন শহরের চৌমোহনা চত্বর থেকে শহীদ মিনার ছাড়িয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানববন্ধন করেন। এ সময় চৌমোহনা চত্বরে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার সৈয়দ মোশাহিদ আহমদের সভাপতিত্বে এক বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হাসান আহমদের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন প্রাক্তন ছাত্র এম এ আহাদ, আবদুল হামিদ, এহসান আহমদ, শাহাদাৎ হোসাইন, মাহবুব সোবহানী, আরিফ নেওয়াজ রফি, দশম শ্রেণির ছাত্র রাফি কোরেশী ও নবম শ্রেণির ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন।
বক্তারা বলেন, বিদ্যালয়ের জায়গা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে জেলার অন্যতম এই বিদ্যাপীঠের উন্নয়নের জন্য এই জায়গার গুরুত্ব অনেক। বিদ্যালয় এলাকায় একটি বিভাগের কার্যালয় স্থাপন করা হলে বিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পরে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রদের নিয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কাছে পেশ করে। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় নির্মাণের জন্য বিদ্যালয়ের ২০ শতক জমি হস্তান্তরের আদেশ বিদ্যালয়ের স্বার্থের পরিপন্থী।
১৮৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয় একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যুগে যুগে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়ে দেশ ও জাতির সেবায় অবদান রেখে চলেছেন। বিদ্যালয়ের সুপরিসর আঙিনা, বিশাল খেলার মাঠ, চারদিকের পরিবেশ সবাইকে মুগ্ধ করে। তাই বিদ্যালয় এলাকায় কার্যালয় নির্মাণ কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুর রহমান চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল বুধবার বলেন, ‘ভূমি হস্তান্তরের চিঠি পাওয়ার কথা শুনে প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র এবং অভিভাবকেরা এসেছিলেন।
আমি সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করছি।স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে ডিসি সাহেবকে মিটিং ডাকতে বলেছি। ভবিষ্যতে বিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ এবং সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্যালয়টি কলেজে উত্তীর্ণ হলে ছাত্রাবাস ও শিক্ষকদের ডরমিটরির জন্য এই জায়গার প্রয়োজন হবে।’
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখব।’