নাটোরে বাগাতিপাড়ায় নিজ স্কুল এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক মোহাম্মদ ফিরোজ আল আজাদ এখন রাস্তায় অটো চালান। সাড়ে ১১ বছর ধরে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন তিনি। সংসারের খরচ আর অসুস্থ মায়ের ওষুধের পয়সা যোগাড় করতেই গত সাড়ে ছয় মাস ধরে তিনি অটো চালাচ্ছেন। তবে স্কুল একদিন এমপিওভুক্ত হবে এমন আশায় এখনও তিনি শিক্ষকতা ছাড়েননি।
সকাল থেকে স্কুলের সময় শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি রাস্তায় অটো চালান আর সকাল দশটার মধ্যেই স্কুলে হাজির হন। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে রুটিন মাফিক ক্লাস নিয়ে আবারো রাস্তায় অটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।
স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ ফিরোজ আল আজাদ নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার ফ্রুট এ্যান্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন বিষয়ের ট্রেড ইন্সটাক্টর। তিনি পাঁকা ইউনিয়নের দোডাংগি গ্রামের মৃত জাফর উদ্দীনের ছোট ছেলে।
ফিরোজ দৈনিক শিক্ষাকে জানান, ২০০৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ওই স্কুলে কারিগরি শাখায় ট্রেড ইন্সট্রাক্টর পদে যোগদান করেন তিনি। স্কুলটির কারিগরি শাখা ২০০১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন হয়েছে কিন্তু ১৬ বছর পেরোলেও শাখাটি এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে কারিগরি শাখার শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকারের কাছে তিনি স্কুলের কারিগরি শাখাটি এমপিওভুক্ত করার দাবি জানান। তিনি জানান, বাবা জাফর উদ্দীনের মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে সাব্বির হোসেনের স্কুল, চার সদস্যের পরিবারের খরচ আর অসুস্থ মা হাজেরা বেগমের প্রতিদিনের ওষুধ খরচ মেটাতে শেষ পর্যন্ত অটো চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন স্বামীকে মানসিক শক্তি যোগান। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ৩৩ শতাংশ জমি ৪২ হাজার টাকায় বন্ধক রেখে এবং স্থানীয় একটি এনজিও থেকে এক লাখ টাকা কিস্তিতে ঋণ নিয়ে অটো কিনেছেন তিনি। এখন অটো চালিয়ে প্রতিদিন তার আয় সাড়ে চারশ’ থেকে পাচশ’ টাকা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, সরকার দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও দেয়নি। তার প্রতিষ্ঠানের কারিগরি শাখা অনেক আগেই সকল শর্ত পূরণ করেছে। সরকার এমপিও ছাড়লে স্কুলের কারিগরি শাখাটি এমপিওভুক্ত হবে এমন আশা তার।