আমাদের জাতির জনকের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা , বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতা সমসাময়িক বিশ্ব নেতাদের ছাড়িয়ে গিয়েছিল । তিনি স্বমহিমায় রাজনীতির উজ্জ্বল এক মহা জ্যোতিষ্ক । রাজনীতির মহাকবি । A great poet of politics . রাজনীতির বিশ্ব কবি বলা যায় তাকে । ‘এবারের সংগ্রাম- স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম-আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’। রাজনীতিতে এর চে’ বড় কবিতা আর কে, কোনদিন আবৃত্তি করে শুনাতে পেরেছে ? আজ পর্যন্ত পারেনি । ভবিষতে ও পারবে কীনা-সন্দেহ হয় ।
কাব্যে এরচে’ বড় উচ্ছাস আর কোনটি ? রাজনীতির কবিতায় এত বড় আবেগ আগে কেউ কোনদিন সৃষ্টি করতে পারেনি । সে আর কারো পক্ষে তখন সম্ভব ও ছিলনা। কোনদিন সম্ভব হবে কীনা-বলা কঠিন । রাজনীতির মহাকবি একাত্তরের সাত মার্চে তার দীর্ঘ কবিতার শেষ পংক্তিমালায় জাতির আশাকে পরিপূর্ণ করে দেন । জাতির স্বপ্নকে নিয়ে যান ভিন্ন আরেক ব্যঞ্জনায় । আশাহত এক জাতি বিভোর হয়ে সোনালী এক স্বপ্ন দেখে ।
এ স্বপ্নের কেবল শুরু ছিল। শেষ ছিল না । এটি জাতির হাজার বছর জেগে দেখা এক মধুর স্বপ্ন । ভারতের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী এ,পি,জে আব্দুল কালামের সে স্বপ্নের মতো- ‘স্বপ্ন তাই নয়, যা মানুষ ঘুমিয়ে দেখে। স্বপ্ন তা-ই , যা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না ।’
বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ) ময়দানে সেদিন আমাদের নতুন করে দু’টি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন । একটি স্বাধীনতার স্বপ্ন, অন্যটি মুক্তির । প্রথমটি অর্জন যতটুকু সহজ ছিল দ্বিতীয়টি ততটুকু ছিল না । আজও নয় । প্রথমটির তাগিদ তাৎক্ষনিক ছিল । প্রথম স্বপ্নটি সার্থক ও সফল করতে দ্বিতীয়টি অপরিহার্য ছিলো । আজও তাই আছে । রাজনীতির মহান দার্শনিক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মাত্র ন’ মাসে বাঙ্গালি প্রথম কঠিন স্বপ্নটি বাস্তবে রুপায়ন করতে পারলেও বহু বছর আমাদের দ্বিতীয় স্বপ্নটি অধরা থেকেছে ।
বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যমন্ডিত ভাষণটি বিশ্বের এক সেরা ভাষণ। কেবল বাঙালি নয়, গোটা বিশ্ববাসীর জন্য অনন্য এক দিক নির্দেশনা স্বরুপ। স্বাধীনতা ও মুক্তির যোগসুত্র খুঁজে পাবার মহান এক রাজনৈতিক মতাদর্শ। এ মতাদর্শটি বঙ্গবন্ধুকে এরিস্টটল, প্লেটো, অধ্যাপক গার্ণার প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মর্যাদায় সেদিন নিয়ে যায়।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এ মহান রাজনীতিবিদ দার্শনিককে আমরাই হত্যা করি । সে সাথে তার দ্বিতীয় স্বপ্নটি ও ।
মার্চ আমাদের অস্তিত্বের একান্ত আপন একটি মাস । সাত মার্চ, সতের মার্চ, পঁচিশ মার্চ, ছাব্বিশ মার্চ-মার্চের প্রতিটি দিন যেন একেকটি স্ফুলিঙ্গ । মার্চ স্বাধীনতার মাস । আমাদের জাতীয়তাবাদের আসল ঠিকানা।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে আমাদের মুক্তির স্বপ্নটি ধুলিস্যাত করে দেয়া হয় । ভাগ্যিস, বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা । আমাদের আজকের প্রধানমন্ত্রি । গণতন্ত্রের এ মানসকন্যা বেঁচে আছেন বলে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় সংগ্রামটি পুনর্বার শুরু করা গেছে। জঞ্জাল সাফ করতে করতে তারও অনেক বেলা বয়ে গেছে ।
এ দেশে আজও হাজার হাজার মানুষ ফুটপাতে এক খন্ড ইটের উপর মাথা বিছিয়ে ঘুমোয় । রেলস্টেশনে ছিন্নমুল মানুষের চেহারাগুলো যে কোন মানুষকে ব্যথিত করে । ন্যূনতম জীবন মান নেই তাদের । প্রায় একই সময়ে স্বাধীনতা অর্জন করে সিঙ্গাপুর এখন আমাদের পঞ্চাশ বছর পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে ।
আমাদের স্বাধীনতার পঁয়তাল্লিশটি বছর হেলায় হেলায় কেটে গেছে । এখন বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সংগ্রামটি এগিয়ে যাক- আজকের স্বাধীনতা দিবসে এ অঙ্গিকার হউক আমাদের সবার ।