টানা কয়েক বছর ধরে জীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছিল চট্টগ্রাম সরকারি দৃষ্টি এবং বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। নাজুক অবস্থা ছিল ছাত্রছাত্রীদের তিনটি হোস্টেল ভবনের। পরে ভবনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। নতুন বিদ্যালয় ও হোস্টেল ভবন নির্মাণের জন্য গত বছরের অক্টোবরে ভাঙা শুরু হয় পুরোনো ভবনগুলো। বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ভেঙে ফেলায় এখন শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হচ্ছে একমাত্র হোস্টেলের বারান্দায়।
চট্টগ্রাম সরকারি দৃষ্টি এবং বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় দুটি আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে একই ভবনে বিদ্যালয় দুটির পাঠদান করা হতো। বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ভেঙে ফেলায় বর্তমানে তিনতলা হোস্টেল ভবনের নিচতলার বারান্দায় চলছে বাক-শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষা কার্যক্রম। আর দোতলার বারান্দায় পাঠদান করা হয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। দুটি বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩০ জন। এর মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮০ জন। বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে শিশু থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে পাঠদান করা হয় শিশু থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত বিদ্যালয় দুটি ষাটের দশকে প্রতিষ্ঠিত হয়। মোট ২ দশমিক ৬৬ একর জায়গায় বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোট ছয়টি ভবন ছিল। এর মধ্যে শিক্ষকদের একটি আবাসিক ভবনসহ পাঁচটি ভবন ভাঙা হয়েছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে শিক্ষার্থীরা যাতে ক্লাস করতে পারে, সে জন্য একটি অস্থায়ী বিদ্যালয় ভবন তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, হোস্টেল ভবনের নিচতলার বারান্দায় টুল-বেঞ্চ বসানো। সেখানে বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে বসে আছে। জায়গা না থাকায় বারান্দায় কোনো বোর্ড বসানো যায়নি। শিক্ষকদের বসার কোনো কক্ষও নেই। দোতলার বারান্দায় চেয়ার পেতে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের। একতলায় তিনজন শিক্ষক ও দোতলায় ছয়জন শিক্ষক যে যাঁর সুবিধামতো ক্লাস নিচ্ছেন।
সাইফুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলল, একসঙ্গে সবার ক্লাস হওয়ায় একটু অসুবিধা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, বার্ষিক পরীক্ষার আগেই বিদ্যালয় ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়। এতে পরীক্ষার আগের কয়েকটি ক্লাস করতে ও পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
সরকারি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ বলেন, ‘সাময়িক একটু অসুবিধা হচ্ছে। তবে শিগগিরই বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ভবনের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে শুনেছি।’
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি ছয় কক্ষের সেমিপাকা ভবন তৈরির কাজ চলছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে অস্থায়ী ভবনটি চালু করা যাবে বলে জানান বিদ্যালয় দুটির তত্ত্বাবধায়ক ও সমাজসেবা কার্যালয় চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
শিক্ষার্থীদের তিনটি হোস্টেল পরিত্যক্ত হওয়ায় এখন একমাত্র হোস্টেল ভবনেই দুটি বিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা থাকছে। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় হোস্টেলটিতে কক্ষের সংখ্যা কম। নিচতলার তিনটি কক্ষে থাকতে হচ্ছে বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ৩০ জন ছাত্রকে। দোতলায় থাকছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ৩০ ছাত্র। তৃতীয় তলায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রীদের রাখা হয়েছে। জায়গা না থাকায় বাক-শ্রবণপ্রতিবন্ধী কোনো ছাত্রীকে হোস্টেলে রাখা হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক বন্দনা দাশ বলেন, নতুন ভবন তৈরি হয়ে গেলে বাক-শ্রবণ বিদ্যালয়ে আবাসিক ছাত্রী ভর্তি করা যাবে। টাকা পেলেই নতুন ভবনের কাজ শুরু করা হবে।
সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, নতুন বিদ্যালয় ভবন ও হোস্টেল করতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একনেকের অনুমোদন পাওয়া গেলে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।