বয়স মাত্র ১৫ বছর। এই বয়সে একজন শিক্ষার্থী তার দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয় বা দশম শ্রেণিতে উঠার পথে থাকে। এই বয়সেই বিই (ইলেক্ট্রিক্যাল) কোর্স সম্পন্ন করেছে সে। অক্টোবরে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে ভারতের আহমেদাবাদের বালক নির্ভয় থাক্কার। এর মধ্য দিয়ে সে ভারতে সবচেয়ে কম বয়সী ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন করার রেকর্ড নিজের দখলে নিয়েছে। আর সে কাজটি করেছে গুজরাট টেকনোলোজিক্যাল ইউনিভার্সিটি (জিটিইউ) থেকে।
তার শিক্ষার এই গতি ত্বরান্বিত হয় অষ্টম শ্রেণি থেকে। নির্ভয় থাক্কার জামনগরের ছেলে। সেখানে সপ্তম শ্রেণি পাস করার পর সে মাত্র ৬ মাসের মধ্যে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে। পরে তিন মাসের মধ্যে শেষ করে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা শেষ করে বৃটেনের ক্যামব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল এক্সামিনেশনস পরিচালিত ইন্টারন্যাশনাল জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (আইজিসিএসই)-এর অধীনে।
বিস্ময়কর এই কাজটি সেই বালক নির্ভয় করেছে, যাকে সিনিয়র কেজিতে শিক্ষকরা দুর্বল ছাত্র হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন। নির্ভয়ের পিতা দাভাল থাক্কার বলেন, এ অবস্থায় আমি আমার সন্তানের উত্তম ফলের জন্য লেগে গেলাম। প্রথাগত পরীক্ষার মাধ্যমে যখন একজন শিক্ষার্থীর স্মৃতিশক্তি যাচাই করা হয় সেখানে আমরা একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করি। এর সাহায্যে কত নম্বর পাবে সেই ভীতি কাটিয়ে ওঠে সে। শুধু পড়াশোনা নয়। আমরা তার ওপর লিচেনিং, ভিজুয়ালাইজিংসহ বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করি। তাতে দেখতে পাই সে অল্প সময়ে অনেক বেশি শিখতে পারছে। নির্ভয়ের পিতা দাভাল থাক্কার নিজে একজন প্রকৌশলী। মা একজন ডাক্তার। তারা দু’জনে তাদের এ পদ্ধতি নিয়ে এগিয়ে যান জিটিইউ, এডমিশন কমিটি ফর প্রফেশনাল কোর্সেস এবং অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশনে।
একপর্যায়ে নির্ভয়কে ভর্তি করানো হয় এসএএল কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এর প্রিন্সিপাল ড. রুপেশ ভাসানি বলেন, ফ্যাকাল্টি সদস্যদের সমন্বয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশেষ কোর্স শিডিউল করা হয়। এতে নির্ভয়কে প্রতিদিন কলেজে ৯ ঘণ্টা কাটাতে হয়। জিটিইউয়ের নিয়ম অনুযায়ী, শুধু নির্ভয়ের জন্য প্রশ্ন তৈরি করা হতো এবং শুধু তার জন্যই ফল ঘোষণা করা হতো। নিজের এ কৃতিত্বের জন্য পিতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে নির্ভয়। এখানে উল্লেখ্য, ছেলের পড়াশোনা দেখাশোনা করার জন্য ৩৬ বছর বয়সে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন নির্ভয়ের পিতা দাভাল থাক্কার। নির্ভয় ফুটবল, দাবা ও সাঁতার পছন্দ করে অবসরে। সে বলেছে, আগামী তিন বছরের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১০টি ডিগ্রি সম্পন্ন করতে চাই আমি। জিটিইউয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. নবীন শেঠ বলেছেন, ইউনিভার্সিটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী প্রকৌশলী হওয়ার ডিগ্রি অর্জন করবে নির্ভয়।