দক্ষিণ সুমাত্রার কৃষিনির্ভর এক গ্রাম তেলুক কেমাং সুনগাই লিন। চারদিকে ফসলে ভরা মাঠ। মায়ের সঙ্গে বসে হাসিমুখে ওগুলোই হয়তো দেখছে ৮ বছরের শিশু আলদি সুগান্দা। এই বয়সেই ভয়ংকর এক অতীত পেরিয়ে এসেছে সে। জীবনের মাত্র ৮ বছর পার করতেই ভয়ংকর অতীতের কি-ই বা আছে?
আজ থেকে ৬ বছর আগে, অর্থাৎ মাত্র ২ বছর বয়স থেকেই সিগারেটে আসক্ত হয় এই বালক। শুধু তাই নয়, ওই বছয় থেকেই সে ছিল প্রচণ্ড ধূমপায়ী, যাদের বলা হয় ‘চেইন স্মোকার’। হাসিমুখেই বললো, সিগারেট ছাড়া থাকা খুব কঠিন কাজ ছিল। যদি সিগারেট না টানতাম তাহলে মুখ তেতো হয়ে যেতো। মাথা ঘুরতো। কিন্তু এখন আমি অনেক ভালো আছি। অনেক শক্তি পাই দেহে।
ভেতরটা মনে হয় সতেজ হয়ে আছে।
সে কিন্তু রীতিমতো এক তারকা। ‘চেইন স্মোকিং শিশু’ হিসাবে বিশ্বপরিচিতি পায়। তাকে নিয়ে প্রকাশ করা ভিডিও ক্লিপ সাড়া তোলে চারদিকে। সেই সঙ্গে বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা শিশু ধূমপায়ীদের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে এই এক ভিডিও।
তার মা ডায়ানা স্মৃতিচারণ করলেন। সিগারেট না পেলে ওই শিশুটা দারুণ রেগে যেত। হাত থেকে সিগারেট কেড়ে নিলে এটা-সেটা ছুঁড়ে ফেলতো। সিগারেট কেনার পয়সা না দিলেও একই অবস্থা করতো সে।
অনেকেই তার সমালোচনা করতেন। কেমন মা হয়েছেন যে এই বয়সে শিশুটি সিগারেট খাওয়া শুরু করেছে? আর তিনি সামাল দিতে পারেননি। ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন স্থানে তামাকের প্রতি শিশুদের এই আসক্তি ব্যাপক ভয়ের চিত্র দেখায়। প্রতিদিন ২ লাখ ৬৭ হাজারেরও বেশি সংখ্যক শিশু সিগারেট খায়। একই ঘটনা আমাদের দেশেও ঘটতে কতক্ষণ? যদি শিশুরা তার চারপাশের অতি পরিচিতি বড়দের প্রতিনিয়ত সিগারেট খেতে দেখে?
এমন প্রশ্ন আলদির মায়ের। তার ধারণা, বড়দের সিগারেট খাওয়ার প্রভাব তার ওপর পড়েছে। শিখেছে যে এটা খেতে হয়। মা প্রতিদিন কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। কাজেই আলদির সিগারেটের প্রতি আসক্তি গড়ে ওঠা আর তা বাজার থেকে কেনার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছে। তবে বড় কথা হলো, বড়দের দেখেই তার আসক্তি জন্মে।
ছোট্ট এক শিশু সিগারেট খাচ্ছে- এই দৃশ্য দেখতেই কেমন বিদঘুটে এবং অস্বাভাবিক লাগবে। কিন্তু আলদির ঘটনা যেন একেবারেই সাধারণ। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার জন্য ঘটনাটি যেন স্বাভাবিক। সেখানে অনেক বাচ্চা ছেলে-মেয়ে সিগারেটে আসক্ত। পরামর্শ, দেখভাল আর সিগারেটের কম দাম ও সহপ্রাপ্যতার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে সেই দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে উঠেছে আলদি। এখন সুস্থ জীবন কাটাচ্ছে। স্কুলে যায় আর ভালো ফলাফল করে।
জাকার্তার এমনই আরেক শিশু ইচা। তার বয়স সবে ১৬। এই বয়সে মেয়েটি ধূমপায়ী। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে সে সিগারেটে আসক্ত। একদিন তার বন্ধু একসঙ্গে সিগারেট খাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। সেই থেকে শুরু। প্রথমে একটু খারাপ লাগলেও, পরে নেশা ধরে যায়। বাবা-মা ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছেন সিগারেটের আসক্তি দূর করতে। কিন্তু হাল ছেড়ে দিয়ে এখন অনুরোধ করছেন সিগারেট খাওয়া কমাতে।
শুধু ইন্দোনেশিয়ায় নয়, যেখানেই শিশুদের মাঝে ধূমপানের চিত্র দেখা যাবে সেখানেই কঠোর হতে হবে বড়দের। বিভিন্ন দেশের সংস্থা ও এনজিওগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সহায়তার হাত বাড়াবে ডাব্লিউএইচও-এর ‘টোবাকো ফ্রি ইনিশিয়েটিভ’। তারা শিশুদের তো বটেই, যেকোনো মানুষকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করবে। ব্যাপকহারে বিজ্ঞাপন প্রচারেও নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করা হবে। সেই সঙ্গে সমাজের মানুষগুলোর সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
সূত্র : সিএনএন