লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার জোংরা মোমিনপুর দাখিল মাদ্রাসাটি দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে এমপিও’র জন্য অপেক্ষায় আছে। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কারও কারও অবসরে যাওয়ার সময়ও ঘনিয়ে এসেছে।
তবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিজ অর্থায়নে শিক্ষকদের চলতি ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিমাসে ৫হাজার করে টাকা ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার জোংরা মোমিনপুর দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে।এই সময় প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটি মূলত এবতেদায়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠে এবং ২০০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে এবতেদায়ি সেকশনে শিক্ষকদের ৫’শ করে টাকা ভাতা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল।তবে ঐ বছরই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম দাখিল শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান শুরু হয়।
দাখিল ও ইবতেদায়ি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ইবতেদায়ি সেকশনের শিক্ষকরা আর ভাতা পাননি। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাসাটি দাখিল সেকশনে উন্নীত হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রতিবছরই দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে শিক্ষার্থীরা। পাসের হারও ভাল। জানা গেছে, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের দাখিল পরীক্ষায় এই প্রতিষ্ঠানটির পাসের হার ছিল ৯০ভাগ। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে জুনিয়ার দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (জেডিসি) ৩৬জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৩৫জন।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এমপিও ভুক্ত হতে পারেননি আজও। ৩২বছরের পুরোনো এই প্রতিষ্ঠানটিতে ইবতেদায়ি সেকশনের শিক্ষকরা হাল ছেড়ে দিলেও দাখিল সেকশনের শিক্ষকরা দীর্ঘ ১৭বছর ধরে বিনাবেতনে শিক্ষকতা করে আসছেন।
আবু নোমান মো.ইয়াইয়া নামের একজন শিক্ষক জানালেন, তিনি আর দুই বছর পর অবসরে যাবেন। তাকে হয়ত বিনাবেতনে চাকুরি শেষ করে অবসরে যেতে হবে|মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট ইউনুস আলী জানালেন বরাবরই ভাল রেজাল্ট করে আসছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানে এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩’শ জন। শিক্ষক কর্মচারী মিলে মোট ১৭জন কর্মরত আছেন এই প্রতিষ্টানটিতে।
প্রতিষ্ঠানটির সহকারি ইংরেজি শিক্ষক নজরুল ইসলাম বললেন, ২০০০ খ্রিস্টাব্দে দাখিল স্তরে উন্নীত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিতে ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি এ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ হলেও এমপিও ভুক্তির বিষয়টি এখনও ঝুলে আছে। শিক্ষকরা একরকম অর্ধাহারে থেকে শিক্ষাদান করছেন, মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে এলাকার গরীব পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীরাই মূলত পড়াশুনা করছে। আমাদের দিকে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
প্রতিষ্ঠাতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নূর ইসলাম জানালেন, অনেক চরাই উৎরাই পাড় করে টিকিয়ে রেখেছি। আমি আমার সর্বস্ব দিয়েছি। এখন সরকারের কাছে শিক্ষকদের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আবেদন করা ছাড়া আমার করার কিছু নেই। তিনি জানালেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সভাপতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম নাজু জানুয়ারি থেকে নিজ উদ্যোগে শিক্ষকদের ৫’শ করে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি তাঁর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির এমপিওই এর চুড়ান্ত সমাধান। এমপিও হলে প্রতিষ্ঠানটি বেঁচে থাকবে।এই এলাকার গরীব ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনা করার সুযোগ পাবে।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম নাজু বললেন, ‘আমি নিজস্ব অর্থায়নে চলতি মাস থেকে ৫ হাজার করে টাকা প্রতিষ্ঠানটিতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।এতে শিক্ষকরা একটু হলেও উপকৃত হবেন।এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির এমপিও’র জন্যও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।