৩৪তম বিসিএস উত্তীর্ণ ৪৫০ শিক্ষক নিয়োগ পাননি - দৈনিকশিক্ষা

৩৪তম বিসিএস উত্তীর্ণ ৪৫০ শিক্ষক নিয়োগ পাননি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সারাদেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য থাকলেও ৩৪তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া ৪৫০ জন সহকারী শিক্ষক (চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে ক্যাডার পদে নিয়োগ হয়নি) গত আট মাসে চাকরিতে যোগদান করতে পারেনি। পুলিশ ভেরেফিকেশন ও মেডিকেল রিপোর্ট তৈরিতে বিলম্ব হওয়ায় তাদের যোগদান ঝুলে রয়েছে।

এই অবস্থায় শিক্ষক স্বল্পতা বেড়েই চলেছে। সংকট নিরসনে ৩৫তম বিসিএসের মাধ্যমে আরও প্রায় দেড় হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এই নিয়োগ প্রক্রিয়াও আটকে রয়েছে। আর শিক্ষক স্বল্পতার কারণে রাজধানীর সরকারি হাই স্কুলগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে থাকা শিক্ষকদেরও বদলি করতে পারছে না মাউশি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান  বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি ৩৫তম বিসিএসের নন-ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রায় শেষ হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে, কিন্তু মেডিকেল রিপোর্ট এখনও হয়নি। এজন্য তাদের পদায়ন করতে পারছি না। তবে আশা করছি, খুব সহসাই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’ আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হতো। ২০১২ সালে এই নিয়োগ কার্যক্রম সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে চলে যায়। আর পিএসসি হাই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পৃথক কোন পরীক্ষা না নিয়ে বিসিএসের চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি-এমন প্রার্থীদের মধ্য থেকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশের ৩৩৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোট সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে ১০ হাজার ২৬৮টি। এর মধ্যে এক হাজার ৯৬৮টি পদ শূন্য রয়েছে।

আর ৩৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ, কিন্তু প্রয়োজনীয় পদ না থাকায় ক্যাডার পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি-এমন প্রার্থীদের মধ্য থেকে ৪৫০ জনকে নন-ক্যাডার হিসেবে সরকারি হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি। গত বছরের আগস্টে ৪৫০ জন প্রার্থীর ব্যাপারে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়ে তা এখনও চলমান রয়েছে।

এই সময়ে ৩৫তম বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য আরও এক হাজার ৫১৮ জনের একটি প্রস্তাব মাউশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়, যা পরবর্তীতে পিএসসিতে পাঠানো হয়। বর্তমানে ৩৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পদায়ন কার্যক্রম চলছে।

শিক্ষক স্বল্পতার কারণে সারাদেশের দুই শতাধিক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে প্রায় দেড় শতাধিক হাই স্কুল চলছে মাত্র ৩-৪ জন শিক্ষক দিয়ে।

আর ৮২টি ডাবল শিফটের স্কুলে প্রভাতী শাখায় অফিস সহকারী ও এমএলএসএস নেই। এসব স্কুলেও প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। ৮৫টি হাই স্কুল চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়া। কর্মচারীর পদও শূন্য রয়েছে প্রায় দুই হাজার। উপজেলা পর্যায়ের বেশির ভাগ বিদ্যালয়েই ইংরেজি, গণিত, হিসাব বিজ্ঞানসহ জটিল বিষয়ের কোন শিক্ষক নেই। জোড়াতালি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে দুই শতাধিক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

এছাড়াও বিদ্যালয় পরিদর্শক, সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মোট ৯৪৯টি পদের অর্ধেকের বেশি পদই ফাঁকা রয়েছে। এতে করে সরকারি হাই স্কুলে একাডেমিক তদারকি ও নজরদারি প্রায়ও নেই বললেই চলে। ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম।

শিক্ষক নিয়োগে বিলম্বের নেপথ্যে : মাউশি জানায়, সর্বশেষ ২০১০ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০১২ সালে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোট এক হাজার ৯০৩ জন সহকারি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর সরকার ২০১২ সালের ১৫ মে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ‘সেকেন্ড ক্লাশ গেজেটেড’ মর্যাদা প্রদান করে, আগে তা ‘থার্ড ক্লাস গেজেটেড’ মর্যাদা পেতেন।

‘সেকেন্ড ক্লাস গেজেটেড’ মর্যাদা প্রদানের পর শিক্ষকদের নিয়োগ এখতিয়ার পিএসসি’র অধীনে চলে যায়। এর ফলে নতুন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ের প্রয়োজন হয়। পিএসসিতে নিয়োগের জন্য আবেদন করলে সংস্থাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানায়- নতুন বিধিমালা না হলে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাবে না।

পরে পিএসসির নিয়ম অনুযায়ী ২০১৩ সালের প্রথমদিকে খসড়া নিয়োগ বিধিমালা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় মাউশি কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও তা অনুমোদন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠালে অনেক বিলম্বে তা অনুমোদন হয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেখানেও আটকে থাকে দীর্ঘদিন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লাগাতার তদবিরে এক পর্যায়ে তা অনুমোদন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু সচিব কমিটির সভায় সেটা আর উত্তাপন হচ্ছে না বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এই অবস্থায় বিসিএসের সর্বশেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি-এমন প্রার্থীদের মধ্য থেকে সরকারি হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিন্ধান্ত নেয়া হয়।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042538642883301