ফেনীর অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে এবং জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহান রাফির চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছাত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে, পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রীর গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনায় ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ রোববার (৭ এপ্রিল) থেকে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাদরাসার স্বাভাবিক কার্যক্রম ও অনির্দিষ্টকালের জন্য হোস্টেল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে ওই কেন্দ্রে চলমান আলিম পরীক্ষা যথা নিয়মে চলবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট ফেনীর অগ্নিদগ্ধ পরীক্ষার্থীর চিকিৎসায় রোববার (৭ এপ্রিল) সকালে ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছাত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। যে কোনো সময় যে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে, বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের জানান, রোববার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার কার্যালয়ে দেখা করেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ফেনীর ছাত্রীর বিষয়ে খোঁজখবর নেন। বিস্তারিত শুনে উনি মর্মাহত হন ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি যত রকম সহযোগিতা লাগে দেবার কথা বলেন। একই সময় তিনি ঘটনায় যারা জড়িত তাদের সবাইকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন বলেও জানান তিনি।
ছাত্রীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন, অধ্যাপক আবুল কালাম, অধ্যাপক রাইহানা আউয়াল, অধ্যাপক নওয়াজেশ খান, অধ্যাপক লুৎফর কাদের, অধ্যাপক বিধান সরকার, অধ্যাপক মহিউদ্দিন, ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম ও জহিরুল ইসলাম। ছাত্রীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন জানান, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী নল দিয়ে তাঁকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। যে কোনো সময় পরিস্থিতি যে কোনো দিকে মোড় নিতে পারে। আগুনে মেয়েটির শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। এর মধ্যে ৪০-৪৫ শতাংশই গভীর।
পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রীর গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনায় ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পি কে এম এনামুল করিম, সহ-সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন জানান, কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাদরাসার স্বাভাবিক কার্যক্রম ও অনির্দিষ্টকালের জন্য হোস্টেল বন্ধ থাকবে।
ছাত্রীর গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনায় সোনাগাজী মাদরাসাসহ গোটা উপজেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার দিন শনিবার বিকেল থেকে মাদরাসা হোস্টেল থেকে শিক্ষার্থীরা চলে গেছে। মাদরাসায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবুল ফজল। এর আগে পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, পুরো তদন্ত শেষ হওয়ার পরই প্রকৃত কারণ জানা যাবে। ঘটনাস্থল থেকে পলিথিন জাতীয় কিছু পাওয়া গেছে। ধারণা হচ্ছে, ওই পলিথিনের ভেতরেই কেরোসিন ছিল।
উল্লেখ্য, শনিবার সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে রাফি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা ৪/৫ জন ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ মাদরাসার এক শিক্ষকসহ দুই জনকে আটক করেছে।
এর আগে, গত ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।