অতিরিক্ত সেশন ফি ফেরতের দাবি অভিভাবকদের - দৈনিকশিক্ষা

অতিরিক্ত সেশন ফি ফেরতের দাবি অভিভাবকদের

বগুড়া প্রতিনিধি |

বগুড়ার নামিদামি স্কুল-কলেজগুলো সরকারি নীতিমালা অমান্য করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফি’র নামে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে বগুড়ার একজন সমাজসেবী আবদুল মান্নান আদালতের শরণাপন্ন হন। ২রা জুলাই আদালত এসব অবৈধ টাকা ফেরত দিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেয়। এই আদেশ কপি জেলা প্রশাসকের হাতে পৌঁছার দুই মাসের মধ্যে টাকা ফেরত নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসককে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি বগুড়ার শুকরা কমিউনিটি সেন্টারে সচেতন অভিভাবকদের একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শতাধিক অভিভাবক শিক্ষার্থী এবং সুধীজন। ওই মতবিনিময় সভায় স্কুল-কলেজগুলোর জুলুম-নির্যাতনের কথা বর্ণনা করে বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবু তালেবুল হাসান বলেন, কয়েক বছর আগে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ টানা ৬ মাস বন্ধ ছিল। প্রতিষ্ঠানটি খোলার পর আমার কাছে ৬ মাসের বাস ভাড়া পরিশোধ করার চাপ দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।

তিনি তখন প্রতিবাদ করে বলেন, আপনাদের বাস তো ৬ মাসের একদিনও রাস্তায় নামেনি। তারপরও কেন ভাড়া দিতে হবে? তখন কর্তৃপক্ষ তাকে তার সন্তানকে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়। পরে তিনি বাধ্য হয়ে টাকা পরিশোধ করেন। এটি একটি উদারহণ এরকম অবৈধভাবে টাকা নেয়ার অসংখ্য প্রমাণ আছে অভিভাবকদের হাতে। অবৈধভাবে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায়ের তালিকায় রয়েছে বগুড়ার প্রায় সবগুলো নামিদামি প্রতিষ্ঠান। ওই দিনের সভায় অভিভাবকরা যেসব স্কুলের নাম উল্লেখ করেছেন সেগুলো হচ্ছে, এসওএস হারম্যান মেইনর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিয়াম মডেল স্কুর অ্যান্ড কলেজ বগুড়া, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ বগুড়া, টিএমএসএস স্কুল ও কলেজ বগুড়া, সিটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বগুড়া, ইয়াকুবিয়া উচ্চ বিদ্যালয় বগুড়া, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

অভিভাবকদের অভিযোগ সেশন ফি’র নামে রীতিমতো ডাকাতি করছে বগুড়ার নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকার নির্ধারিত নীতিমালা কেউই তোয়াক্কা করছে না। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গজিয়ে ওঠা প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দৌরাত্ম্য সীমা অতিক্রম করেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের ভর্তি করার পরে অনেকটা দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। অতিরিক্ত সেশন ফি ছাড়াও বাজার থেকে চারগুণ পাঁচগুণ বেশি টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বই, খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ কিনতে হয় বাধ্য হয়ে। এমন কি স্কুল ড্রেসও প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হয়। নামিদামি এসব স্কুল কলেজগুলোতে একবার কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো হলে পর্যায়ক্রমে নানা বাহানায় একের পর এক খাত দেখিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এসব খাতগুলো দেখলে যে কেউ পিলে চমকে যাবে। 

এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যে রশিদ বইয়ের মধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা আদায় করে সেই রশিদ বইটাও কিনতে হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। কম্পিউটার ল্যাব, বিদ্যুৎ বিল, খেলাধুলা, পাঠাগার, নেম প্লেট, কেন্দ্র ফি, দরিদ্র তহবিল, সিলেবাস ফি, প্রোসপেকটাস ফি (এটি মূলত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন)। মজার ব্যাপার হলো অনেক স্কুল আছে তারা পাঁচ দশ বছরেও ম্যাগাজিন প্রকাশ না করেও প্রতি বছর ম্যাগাজিন ফি নিচ্ছে। ফি নেয়া হচ্ছে মিলাদ মাহফিলেরও। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন ডাকাতি কারবার বন্ধ করতে বগুড়ার একজন সমাজসেবী আবদুল মান্নান আকন্দ হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। তিনি জনস্বার্থে চলতি বছরের ৩রা ফেব্রুয়ারি একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিটকারীর আইনজীবী মোশারফ হোসেন মনির জানান, জনস্বার্থে বগুড়ার একজন সমাজসেবী আবদুল মান্নান আকন্দ হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। ওই রিটের প্রেক্ষিতে গত ২রা জুলাই হাইকোর্টের বিচারক জে.বি.এম হাসান এবং বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ একটি আদেশ দেন। আদেশে উল্লেখ করা হয় মাত্রাতিরিক্ত সেসন ফি গ্রহণকারী বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি নীতিমালার বাইরে নেয়া বাড়তি টাকা অভিভাবকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। হাইকোর্টের এই আদেশ বগুড়ার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যও প্রযোজ্য হবে।

হাইকোর্টের এই আদেশে বগুড়া জেলা প্রশাসককে তদন্ত পূর্বক ২ মাসের মধ্যেই সেসন ফি হিসেবে বিধিমালার বাইরে নেয়া অতিরিক্ত ফি যেন অভিভাবকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয় তার নির্দেশনা আছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে রিটকারী আবদুল মান্নান আকন্দ বলেন, বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশন ফির নামে রীতিমতো ডাকাতি চলছে। পাশাপাশি সুনির্দিষ্টভাবে ৬টি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইনের তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছেমতো ফি আদায় করছে। তিনি বলেন, বিবেকের তাড়না থেকেই আমি আদালতে রিট করেছিলাম। আদালতের নিদের্শনা যদি কোনো প্রতিষ্ঠান না মানে তাহলে আমি আবারো আইনের আশ্রয় নেবো।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েস আহাম্মদ জানান, আদালতের আদেশ কপি এখনো তার হাতে পৌঁছেনি। আদেশটি দেখার পরে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান। 

পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.015100955963135