নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নেই প্রায় পাঁচ মাস। এতে কলেজটির প্রশাসনিক কাজসহ ব্যাহত হচ্ছে ৭৩৩ শিক্ষার্থীর পাঠদান। পাশাপাশি চার মাসের বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে না পারায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন কলেজটির ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
কলেজটিতে কর্মরতরা জানান, গত বছরের ৩ অক্টোবর কলেজের অধ্যক্ষ মো. ইদ্রিস মিয়া দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজে বদলি হন। ৪ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি আদেশে তাঁর স্থলে যোগদান করার কথা মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার সরকারের। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ওই আদেশে স্বাক্ষর করেছেন উপসচিব ফাতেমা তুল জান্নাত। গত পাঁচ মাসেও ওই আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষকরা জানান, অধ্যক্ষ যোগদান না করায় একজন জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের দায়িত্বে কলেজের পাঠদানের কার্যক্রম সচল থাকলেও প্রশাসনিক অন্যান্য কাজসহ আর্থিক লেনদেন বন্ধ রয়েছে। এতে কলেজটিতে কর্মরত ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চার মাস ধরে তাঁদের বেতন তুলতে পারছেন না।
কলেজটিতে বর্তমানে ডিগ্রি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ৭৩৩ জন। এর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৫৩ জন এবং ডিগ্রি পর্যায়ে ৩৮০ জন। অধ্যক্ষের অভাবে পাঠদানসহ কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছে এসব শিক্ষার্থী।
কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হারুন অর রশিদ বলে, ‘প্রায় পাঁচ মাস ধরে অধ্যক্ষ যোগদান না করায় কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রম যেমন ভেঙে পড়েছে, তেমনি শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’
এদিকে কলেজের প্রধান অফিস সহকারী হাফিজুর রহমান জানান, কলেজটিতে ১১ জন শিক্ষক, তিনজন প্রদর্শক, একজন শরীরচর্চা শিক্ষক ও ১০ জন কর্মচারী কর্মরত। অধ্যক্ষ না থাকায় সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে শিক্ষকরা বেতন তুলতে পারলেও প্রদর্শক, শরীরচর্চা শিক্ষক ও কর্মচারীরা বেতন তুলতে পারছেন না। কলেজের পরীক্ষাসংক্রান্ত ফি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করা যাচ্ছে না। এর ফলে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনায় উপকরণ ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
কলেজের এমএলএস ফজলুল হক বলেন, ‘সামান্য চাকরির আয়ে আমার আট সদস্যের পরিবার চলে। চার মাস ধরে বেতন তুলতে না পেরে ধারদেনা করে পরিবারের ভরণ-পোষণের জোগান দিচ্ছি। আগামী মাসে বেতন তুলতে পারব কি না, তা-ও জানি না।’
কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক স্বপন মিয়া বলেন, ‘নতুন অধ্যক্ষ যোগদান না করায় কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন করার এখতিয়ার আমাদের নেই। এ কারণে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন সম্ভব না হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রমের উপকরণ ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে স্বাভাবিক পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে জেলা পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেখভালের দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের আছে। চিলাহাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ না থাকার বিষয়টি আমার জানা আছে। দ্রুত কলেজটি পরিদর্শন করে সেখানকার সমস্যাগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।’