অধ্যক্ষকে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়ার সাথে জড়িত রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ১৬ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে কারিগরী শিক্ষা বোর্ড। শুক্রবার (০৩ জানুয়ারি) ইনস্টিটিউটির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে কারিগরী বোর্ডে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল। তা কার্যকর হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের সাবেক ও বর্তমান ১৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে চারজনের ছাত্রত্ব বাতিল, পাঁচজনের সনদ আটক ও সাতজনকে অন্যত্র বদলির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। কারিগরী বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন, ছাত্রলীগের পলিটেকনিক শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ( বহিস্কৃত) ও কম্পিউটার বিভাগের অষ্টম পর্বের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন ওরফে সৌরভ, একই সেশনের ইলেকট্র মেডিকেল বিভাগের সপ্তম পর্বের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম, ইলেকট্রনিক্স বিভাগের পঞ্চম পর্বের মুরাদ হোসেন এবং মেকানিক্যাল বিভাগের তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী সজিব ইসলাম।
যাদের সনদ আটক রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা হলেন, ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের কৌশিক জামান ওরফে বনি, ইলেকট্রো-মেডিক্যাল বিভাগের সালমান রহমান ওরফে টনি, পাওয়ার বিভাগের সাব্বির অহম্মেদ, মেকাট্রনিক্স বিভাগের হাসিবুল হাসান ও কম্পিউটার বিভাগের মারুফ হোসেন।
ঘটনার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার দায়ে পাওয়ার বিভাগের ষষ্ঠ পর্বের (অকৃতকার্য) নাঈম ইসলামকে বরিশাল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে, ইলেকট্রনিক্স সপ্তম পর্বের প্লাবন কুমার কুন্ডুকে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে, মেকাট্রনিক্স সপ্তম পর্বের মেহেদী মাহমুদকে শরিয়তপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে, মেকানিক্যাল বিভাগের সপ্তম পর্বের মহেদি হাসানকে কাপ্তাই বিএস পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে, ইলেকট্রনিক্স বিভাগের পঞ্চম পর্বের ওমর আজিজকে পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে, কম্পিউটার বিভাগের তৃতীয় পর্বের মাহবুবুর রহমানকে বরগুনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে এবং পাওয়ার তৃতীয় পর্বের মাসুদ রানাকে খুলনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে বদলির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এর আগে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, ৫ শিক্ষার্থীর মূল সদনপত্র আগামী তিন বছর আটকে রাখা ও ৭ শিক্ষার্থীকে টিসি দিয়ে অন্য কোন ইন্সটিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তদন্ত কমিটির এই সুপারিশ গত মাসে বাংলাদেশ কারিগরী বোর্ডে পাঠানো হয়েছিল।
কারিগরী বোর্ড গত ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিউটির তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করে। হয়।
রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন জানান, গত বুধবার কারিগরী বোর্ডের সিদ্ধান্ত তারা হাতে পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আমাদের একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সবার সম্মতিক্রমে ২ জানুয়ারি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও সনদ আটকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। আর যাদের অন্যত্র বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাদের পরীক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে পরীক্ষার পরে ১ ফেব্রয়ারি থেকে তাদের বদলির আদেশ কার্যকর করা হবে। তবে গতকাল সভার শেষে তাদের টিসিতে ইস্যু করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইনস্টিটিউটের মিডটার্মে অকৃতকার্য ও ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা দুই শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে অধ্যক্ষের ওপর চাপ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এনিয়ে গত ২ নভেম্বর অধ্যক্ষের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। একই দিন দুপুরে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে টেনেহিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয় ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। এনিয়ে অধ্যক্ষের দায়ের করা মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখসহ ৫০ জনকে আসামি করা হয়। এ পর্যন্ত তাদের ১৮জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।