অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ - দৈনিকশিক্ষা

হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অর্থ লোপাটঅধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ইউম্যান বায়োকেমিস্ট্রি বইটি হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে কিনে রাখা হয়েছে। তদন্ত কমিটি বইটি খুলে দেখে, ফটোকপি করে বাঁধাই করে রাখা বইটির দাম পড়েছে সাকল্যে ২শ টাকা। কিন্তু কাগজকলমে এর দাম দেখানো হয়েছে ২৪ হাজার ৫শ টাকা। এই দরে মোট ৫০টি বই কিনেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে খরচ হয়েছে ১২ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং এই টাকা সরকার থেকে কলেজের লাইব্রেরি উন্নয়নে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এই খাতের সব টাকাই মেরে দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য । 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, একটি চিকিৎসা সরঞ্জাম (ফুল-ফাংশনাল এলডারলি নার্সিং মেনিকিন) কেনা হয়েছে ৮ লাখ ১৫ হাজার ১০০ টাকায়। অথচ ভারতের বাজারে এটি প্রায় এক লাখ রুপিতে কেনা যায়। এভাবেই হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের উন্নয়নের বরাদ্দ হওয়া সাড়ে ১৫ কোটি টাকা লুটে খেয়েছেন কলেজটির অধ্যক্ষ ডা. আবু সুফিয়ানসহ সংশ্লিষ্টরা। ওই সব সরঞ্জামের কেনা দামের সঙ্গে বাজারদরের কোনো সামঞ্জস্য নেই। বাজারদরের কয়েক গুণ বেশি দাম দিয়ে কেনা হয়েছে প্রতিটি পণ্য।

কলেজটির এসব দুর্নীতি প্রকাশ পাওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল সেই কমিটির প্রতিবেদনে সরকারি টাকা ‘মেরে’ খাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। গত ১৮ ডিসেম্বর ছয় পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সেবা বিভাগের সচিবের কাছে জমা দেয়া হয়। এখন প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দপ্তরে রয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় এখন অধ্যক্ষ ডা. আবু সুফিয়ানকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব জিএম সালেহ উদ্দিন বলেছেন, হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। এখন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কবে নাগাদ সেটি নেয়া হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, এটি মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। তদন্ত কমিটির প্রধান ও মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আজম খান বলেছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ১০৯ টাকায় ৫১৮ ধরনের মালামাল কেনার পর ভ্যাটের হিসাবসহ খরচ হয়েছে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪২ হাজার টাকার ল্যাপটপ কেনা হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকায়। ৬০ হাজার টাকার কালার প্রিন্টারের দাম পড়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ৩৯ হাজার টাকার রেফ্রিজারেটর ৮৫ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। মানবদেহের মেডিকেল চার্ট বাজারে যার দাম ৫০০ টাকা, তা কেনা হয়েছে ৭ হাজার টাকায়। এভাবে বেশি দামে ৫১৮ ধরনের জিনিস কেনা হয়।

শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কম্পিউটার, আসবাব, মেডিকেল সরঞ্জাম কেনার জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। দরপত্রের মাধ্যমে এ কাজ পায় ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজ ও মতিঝিলের পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে কলেজটির অধ্যক্ষ মো. আবু সুফিয়ান মালামাল নির্বাচন ও স্পেসিফিকেশন কমিটি, বাজারদর কমিটি, দরপত্র প্রস্তাব ও উন্মুক্তকরণ কমিটি এবং দরপত্র প্রস্তাব ও মূল্যায়ন কমিটিসহ যে চারটি কমিটি গঠন করেছেন, সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

কমিটিতে যাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বা অবগত নন বলে তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন। এ ছাড়া কমিটিগুলোর কোনো সভা বা সমন্বয় ছাড়াই অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান একাই এ দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। পাশাপাশি দরপত্রের মাধ্যমে সরবরাহ আদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠান নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজ ও পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের এ অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে নির্ঝরা কিংবা পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনালে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লাইন ডিরেক্টর পদে ডা. আব্দুর রশীদ নিয়োগ পাওয়ার পরই হঠাৎ করে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে কেনাকাটায় দুর্নীতি বেড়েছে। হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজেও এর যোগসূত্র আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির প্রধান আজম খান বলেছেন, থাকতে পারে। তিনি বলেন, কেনাকাটার বরাদ্দগুলো দেয়া হয় অর্থবছরের শেষ প্রান্তে। যে কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ অনেকটা তাড়াহুড়ো করে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। ফলে বড় ধরনের দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়।

শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮  খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি। হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যার নতুন ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় কলেজটির অস্থায়ী ক্যাম্পাস। বর্তমানে এর শিক্ষার্থী ১৫০ জন।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045418739318848