রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মেয়েকে বিয়ে না করায় যৌন হয়রানির মামলা ও চাকরি ছেড়ে দেওয়ার হুমকিরর অভিযোগ করছেন ওই স্কুলটির প্রভাষক দুরুল হুদা। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর আলুপট্টি মোড়ে অবস্থিত একটি রেঁস্তোরায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এই দাবি করেন।
জানা যায়, স্কুলটির অধ্যক্ষ শফিউল আলম ও তার স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানুর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে বাসায় গিয়ে পড়াতেন দুরুল হুদা। সেই ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগে নগরীর মতিহার থানায় দুরুল হুদাকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গত ২০ অক্টোবর মামলা করেন অধ্যাপক লায়লা। ওইদিনই তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রভাষক দুরুল হুদা বলেন, গত ১২ থেকে ১৭ অক্টোবর আমার টিচার ট্রেনিং চলছিল। ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অধাপক লায়লা ফোন করে মেয়ের বিজ্ঞানের একটা অধ্যায়ে সমস্যা আছে বলে আমাকে তার বাসায় ডাকেন। আমি গিয়ে ছাত্রীকে পড়িয়ে আসি। রাত ৯টা ৪২ মিনিটে অধ্যক্ষ স্যার নিজে ফোন করে আমাকে আবার তার বাসায় ডাকেন। বাসায় গেলে অধ্যক্ষ স্যার আমাকে স্কুলের চাকরি ছাড়তে বলেন।
কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ স্যার বলেন, ‘তুমি আজ পড়াতে এসে আমার মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছো। আমার মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তোমাকে সাতদিন সময় দেওয়া হল, এর মধ্যে তুমি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে গ্রামে গিয়ে হালচাষ করো।’ পরে বিষয়টি আমি স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে অবহিত করি।
এরপর গত ১৯ অক্টোবর রাবির সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস ফোন করে স্কুলের অধ্যক্ষের কক্ষে আমাকে আসতে বলেন। সেখানে গেলে অধ্যক্ষ স্যার, তার স্ত্রী এবং অধ্যাপক জান্নাতুল আমার সঙ্গে অশালীন কথা বলেন এবং চাকরি ছাড়ার জন্য আবারো হুমকি দেন।
তবে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘ওইদিন ঘটনা শোনার জন্য তাকে (দুরুল হুদা) ফোন করেছিলাম। কিন্তু তিনি আসেননি।’
দুরুল হুদা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মাস্টার্স পরীক্ষায় সিজিপিএ ৪ অর্জন করি এবং মেধাতালিকায় প্রথম হই। আমি বিভাগে শিক্ষক পদে আবেদন করি। অধ্যক্ষ স্যার ও তার স্ত্রী চাইছিলেন আমি যেন তাদের বড় মেয়েকে বিয়ে করি। কিন্তু আমি অন্যত্র বিয়ে করি। এতে তারা মনক্ষুন্ন হোন। তাই আমি যেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে ভাইভা দিতে না পারি সেজন্য পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে তারা আমাকে হয়রানির মধ্যে রেখেছেন।
স্কুলের শিক্ষক জান্নাতুন নাহার, ফারজানা মুনিরা আক্তার কেয়া, শ্রী হরেন্দ্রনাথ রায় অশালীন আচরণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তির দাবি করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়ায় অধ্যক্ষ তাদেরকেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বলে জানান দুরুল হুদা।
তবে এ ঘটনার পর থেকে ছাত্রী স্কুলে যাচ্ছে না বলে অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রী প্রচার করলেও ওই ছাত্রী ঘটনার পরেরদিনও স্কুলে এসেছে এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাতেও অংশ নিয়েছেন বলে জানান দুরুল হুদা।
সবশেষ তিনি বলেন, ‘পরিবার, চাকরি ও জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। তাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। যদি মেয়ের বিয়ে দিতেই চাইতাম তাহলে তার (দুরুল হুদা) পরিবারকে জানাতাম। আর দুরুল হুদা যে সময়ের কথা বলছে তখন আমার মেয়ের বয়স ১৮ হয়নি। কাজেই বিয়ের কথাবার্তার প্রশ্নই আসে না।’
অধ্যক্ষ শফিউল আলমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।