অধ্যাপক মোহাম্মদ নোমানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি - দৈনিকশিক্ষা

অধ্যাপক মোহাম্মদ নোমানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঐতিহাসিকভাবে নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। তবুও যাকে আমরা বলি ‘দেশের বাড়ি’ সেখানে আমাদের পরিচয় হয়নি। আমার সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় বাংলাদেশ সচিবালয়ে। ১৯৭২ সালে আমি যখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, তখন তিনি গণশিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

কিংবদন্তিতুল্য এ শিক্ষকের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় আমলা রূপে, আমরা দু’জনই তখন নির্ভেজাল আমলা। তবে আমলা হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষকের সব গুণই তার ছিল। অত্যন্ত বিনয়ী, সদালাপী, কনিষ্ঠদের প্রতি স্নেহশীল। এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি প্রথম দর্শনেই শ্রদ্ধা আদায় করে নেন।

কিন্তু শিক্ষকের মেজাজ সত্ত্বেও তিনি ছিলেন একজন সফল প্রশাসক। কলেজ প্রশাসনের কাজটি ছিল অত্যন্ত স্পর্শকাতর। একজন দক্ষ আমলার মতো আইন-কানুনের ব্যাপারে তিনি ছিলেন আপসহীন। কোনো রক্তচক্ষু বা প্রলোভন তাকে নীতির পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। মন্ত্রণালয়ের ছোট-বড় সবাই তাকে শ্রদ্ধা করতেন। তার বন্ধুরা বলতেন, পাকিস্তানি হানাদাররা ১৯৭১ সালে তার বাসা আক্রমণ করে ও তাকে মারার জন্য বন্দুক তাক করে; কিন্তু তার মুখে সারল্য, পবিত্রতা ও নিষ্কলুষ এত স্পষ্ট ছিল যে জালিমের হাত কেঁপে যায়। এরা বন্দুক নামিয়ে নেয় এবং আমাদের পরম সৌভাগ্য যে তিনি বেঁচে যান।

শিক্ষকতা তার অগত্যার গতি ছিল না। তিনি স্বেচ্ছায় শিক্ষকতাকে জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নেন। ১৯৫১ সালে ইংরেজিতে এমএ পাস করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগ দেন। তার পরের বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে সরকারি কলেজে যোগ দেন। বিশ শতকের চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে অনেক মেধাবী শিক্ষকই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ছেড়ে সরকারি কলেজে চলে যেতেন। এর কারণ ছিল দুটো : তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকের প্রারম্ভিক বেতন ছিল ১২৫ টাকা; সরকারি কলেজে ছিল ১৫০ টাকা। তখন ২৫ টাকা একটি বড় অঙ্ক ছিল। এর চেয়েও বড় কারণ ছিল সরকারি চাকরিতে পেনশন ছিল; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পেনশন ছিল না।

ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্ররাই শুধু নয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ছাত্ররাও সরকারি কলেজের চাকরি পছন্দ করতেন। অধ্যাপক নোমান সরকারি কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজেই বেশিদিন কাজ করেছেন। তবে বদলির চাকরি সুবাদে তিনি চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট এমসি কলেজেও পড়িয়েছেন। শিক্ষক হিসেবে তার সাফল্য ছিল অসাধারণ। ইংরেজি একটি আবশ্যিক বিষয় হওয়ায় উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে তিনি দেশের সব বিষয়ের এবং সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্রদের পড়ানোর সুযোগ পান।

তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার ছাত্ররা এখনও উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। এ মূল্যায়ন কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ। এখানে অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার যে, অধ্যাপক নোমান ১৯৭০ সালে সারা পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে প্রেসিডেন্টের পদক পান। শিক্ষাক্ষেত্রে তার অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

শিক্ষকতার কাজ করতে করতে তিনি শিক্ষা প্রশাসনে জড়িয়ে পড়েন। পাঁচ বছর ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। সাত বছর ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ; কিছু সময় জাহাঙ্গীরনগরে উপাচার্যের দায়িত্বও পালন করেন। এছাড়া তিনি কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল কলেজের অধ্যক্ষও ছিলেন। একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ছিলেন বলেই এসব গুরুদায়িত্ব তিনি অতি সহজে পালন করতে পেরেছেন। বাইরে সফল কর্মী মনে হলেও তিনি আসলে ছিলেন আদর্শবাদী।

সাহিত্যের এই অধ্যাপক ছিলেন রোমান্টিক কবিদের মতো সত্য, সুন্দর ও পরিপূর্ণতার পূজারি। জীবনের কোনো ভোগ-লালসাই তাকে ন্যায় ও সুন্দরের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। তাই তার বন্ধু কবি শামসুর রাহমান লিখেছেন,

‘যখন তারুণ্য ছিল দেহ মনে কীটস-এর ওড

আপনাকে বড় বেশি করেছে উন্মন

মৎস্যকন্যা ডেকে নিয়ে গেছে নীল সমুদ্রের দিকে;

এই দর কষাকষি, ক্রুর ঘষাঘষিময় জগৎ সংসারে

ছিলেন নিছক বেমানান, বুঝি তাই

ফেসাদ, বচসা, খেয়োখেয়ি

থেকে রেখেছেন

নিজেকে আড়ালে আর একদিন বড়ই নিঃসঙ্গ

হঠাৎ গেছেন বিশে অন্তহীন ঘন কুয়াশায়।’

আজ মৃত্যুদিবসে তার প্রতি রইল শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ড. আকবর আলি খান : অর্থনীতিবিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003896951675415