অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) দেয়া নির্দেশনা অনুসরণ করছে না অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি ইউজিসির দেয়া এক কার্যালয় স্মারকপত্রে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী জুনে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা যাবে। যদিও ইউজিসির সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করে এখনই শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
জানা যায়, গত এপ্রিলের শুরুর দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া, মূল্যায়ন ও শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম অনতিবিলম্বে বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয় ইউজিসি। কিন্তু আর্থিক ক্ষতি হওয়ার কারণ দেখিয়ে করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এরপর গত ৭ মে ইউজিসির দেয়া এক কার্যালয় স্মারকপত্রে এ বিষয়ে বলা হয়, কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত প্রোগ্রামগুলোর অনুমোদনপত্রে বর্ণিত শর্তাদি এবং কমিশন কর্তৃক প্রণীত ভর্তিসংক্রান্ত নীতিমালার আলোকে আগামী জুনে অনলাইনে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা যাবে। তবে কোনোক্রমেই প্রোগ্রাম অনুমোদনপত্রের কোনো শর্ত লঙ্ঘন করা যাবে না।
যদিও ইউজিসির ওই নির্দেশনার পর পরই শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে দেয়ার অভিযোগ বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট ও ভর্তি অফিসে যোগাযোগ করেও এর প্রমাণ মেলে।
গতকাল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটের দেয়া ভর্তিসংক্রান্ত সেলফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে ভর্তির কর্মকর্তা জানান, ভর্তি কার্যক্রম এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আরো আগেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সে হিসেবে ইউজিসির দেয়া ভর্তি কার্যক্রম শুরুর আগেই ভর্তি কার্যক্রম শেষ হতে চলেছে ড্যাফোডিলের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির মুখপাত্র ও স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ইউজিসির কার্যালয় স্মারকে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রমের জন্য জুনের যে ডেডলাইন, সেটি হচ্ছে ডুয়াল সেমিস্টারের প্রোগ্রামের জন্য। আমরা এখন ট্রাই সেমিস্টারের ভর্তি নিচ্ছি। ডুয়াল সেমিস্টারের প্রোগ্রামগুলোতে জুনে ভর্তি নেব। এছাড়া ইউজিসির কার্যালয় স্মারকের সাধারণ নির্দেশনাবলিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে তাদের একাডেমিক ক্যালেন্ডার সংস্কার করতে পারবে। সে হিসেবে আমরা একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে একাডেমিক ক্যালেন্ডার রিশিডিউল করেছি।
একইভাবে ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম চলছে বলে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া সেল নম্বরে যোগাযোগ করলে ভর্তি কর্মকর্তা জানান, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে এখনই ভর্তির সুযোগ রয়েছে।
ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছে নর্দান ইউনিভার্সিটিও। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম চলছে বলে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া সেল নম্বরে যোগাযোগ করলে ভর্তি কর্মকর্তা জানান, ভর্তি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সব শিক্ষার্থীর জন্য টিউশন ফির ওপর ছাড়ও দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ইউজিসির কার্যালয় স্মারকের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি বিষয়ে বলা হয়েছে, জুনের দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা করতে পারবে। আর নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করবে জুলাইয়ে।
এদিকে নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার পর থেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে ক্লাস নিতে উৎসাহ দিয়ে আসছিল ইউজিসি। এরপর দীর্ঘ ছুটি পুষিয়ে নিতে অনলাইনে ক্লাস নিতে শুরু করে দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইউজিসির হিসাবে বর্তমানে ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে ৫৬টি বেসরকারি ও বাকি সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৫টি।