করোনার ধাক্কাটা উন্নত আর উন্নয়নশীল দেশগুলো একইরকমভাবে অনুভব করেনি। উন্নত দেশগুলো প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সংকটময় মুহূর্তে টিকে থাকার লড়াই করতে সক্ষম হলেও হোঁচট খাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর শিক্ষাক্ষেত্র।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থী। বর্তমান সময়ে সব থেকে দুশ্চিন্তায় যাদের দিন পার হচ্ছে, তারা মোট জনসংখ্যার গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ, যাদের হাত ধরেই দেশ সম্ভাবনার দিকে অগ্রসর হবে। আজ তারাই ঘোর অমানিশায়, শুধুই চিন্তা কী হবে? এই হতাশাকে কাটিয়ে তুলতে সরকার অনলাইনভিত্তিক ক্লাস চালু করার সিদ্ধান্ত নিলেও তার আওতায় কতজন শিক্ষার্থী তা আজ ভাবনার বিষয়। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে আরও জানা যায়, দেশের ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী গ্রাম পর্যায়ের, তাও আবার নিম্নবিত্ত অথবা নিম্ন মধ্যবিত্ত। তাদের অধিকাংশের মতামত ইচ্ছা থাকলেও সাধ্য নেই ক্লাসগুলোতে যুক্ত হওয়ার, ব্যয়বহুল নেট আর উন্নত ডিভাইসের অভাবে অংশ নিতে সক্ষম নয় তারা। এ অবস্থায় চলতি অনলাইন ক্লাসে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকছে। অন্যদিকে উন্নয়শীল দেশ হওয়ায় শ্রেণিভিত্তিক পাঠদান কর্মসূচিতে অভ্যস্ত থাকার দরুন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যার ফলস্বরূপ শিক্ষাক্ষেত্রে এক বিরাট ভয়াবহতার আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা।
এবার আসা যাক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বিষয়ে। দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ বিশেষ চাহিদা-সম্পন্ন। তাদের মধ্যে ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে কেউ দৃষ্টি, শ্রবণ, বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। এসডিজির ১১ নম্বর গোলে বলা হয়েছে, যে কোনো ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বিশেষ পরিষেবা ও নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা প্রয়োজন।
এ অবস্থায় অনলাইনভিত্তিক ক্লাস বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য কতখানি ফলপ্রসূ বা সরকার গৃহীত পদক্ষেপ কার্যকর তা যেন সে সব শিক্ষার্থীর জানার বাইরে। তাদের মতামত তাদের জন্য (বাক ও শ্রবণ) এমন কোনো ডিভাইস এখন অব্দি তাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি, যেটা ব্যবহার করে তারা ক্লাসগুলোতে অংশ নিতে সক্ষম।
একটি জাতির শিরদাঁড়া যেহেতু শিক্ষা, তাই অন্য ক্ষেত্রগুলোর মতো শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ (সেটা স্বাভাবিক বা বিশেষচাহিদাসম্পন্ন) ও বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগ একান্তভাবে কাম্য।
লেখক: মুনিয়া রহমান,শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,
সাভার, ঢাকা