শহরের প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে গ্রামে এ ধরনের কার্যক্রম চলছে না। তাই গ্রামের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রম থেকে কার্যত অন্ধকারে রয়েছে। টেলিভিশনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য যে পাঠদান চলছে, তার সুফল থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা। সংসদ টিভির মাধ্যমে এই পাঠদান চললেও ডিশ সংযোগ ছাড়া এই টিভির পাঠদান দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে উভয় দিক থেকেই তারা বঞ্চিত। বুধবার (১৫ জুলাই) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, যশোর, রাজশাহীসহ কয়েকটি বিভাগীয় অনলাইনে শিক্ষাদান কর্মসূচি চালু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এর সংখ্যা হাতে গোনা। আবার অনলাইন ক্লাসে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ থাকলেও সরকারি স্কুলের আগ্রহ কম। অনলাইন ক্লাসের জন্য কখনো ফেসবুক লাইভ কিংবা জুম ব্যবহার করে শিক্ষকেরা তাদের ক্লাস নিচ্ছেন।
দেশের ৯০ থেকে ৯২ ভাগ শিক্ষার্থীর কাছে টিভি ও অনলাইনের পাঠদান পৌঁছানো সম্ভব বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করলেও তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরা। তারা বলছেন, সারা দেশের অর্ধেক শিক্ষার্থী এই সুযোগ পেতে পারে।
নলছিটির আমিরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক জানান, সংসদ টিভির মাধ্যমে পাঠদান দেখা যায় না, কারণ এই চ্যানেল দেখতে হলে ডিস সংযোগ লাগে। কিন্তু গ্রামে এ ধরনের সুবিধা নেই। আর অনলাইনে পাঠদানের জন্য জুমের নাম কেউ শোনেনি, ব্যবহারও জানে না।
ঝালকাঠির আজিজুল পারভেজ নামে এক অভিভাবক জানান, ইন্টারনেটের স্পিড খুবই দুর্বল। এই নেটওয়ার্ক দিয়ে অনলাইনে পাঠদান সম্ভব নয়। ফেসবুকে কোনো কোনো স্কুল লাইভ ক্লাস চালালেও ইন্টারনেটের স্পিড কম থাকায় দেখা যায় না। ২০ মিনিটের একটি ক্লাস দেখতে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় লাগে। ফলে কিছুই বোঝা যায় না। তাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে সবাই।
শিক্ষা বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, পাঠদান রয়েছে শিক্ষক বাতায়ন নামের একটি পেজে। সেখানে অন্তত ৪ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষক সংযুক্ত আছেন। এখানে কনটেন্ট আছে আড়াই লাখেরও বেশি। সেখান থেকেও শিক্ষার্থীরা শিখতে পারে।
ইমতিয়াজ নামে এক অভিভাবক জানান, প্রতিদিন অনলাইন ক্লাসে যে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়, তার খরচ মেটানোও সম্ভব নয় গ্রামের অভিভাবকদের। আর্থিক অসচ্ছলতাও ইন্টারনেট ব্যবহার না করার কারণ বলে তিনি মনে করেন।
সরকারি হিসাবে দেশে প্রাথমিক স্কুল আছে ৬৪ হাজার, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩০ হাজার। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ কোটি।
করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার গত মার্চে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। দুই-তিন মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে এমন ধারণা থেকে প্রথম দিকে স্কুল-কলেজগুলো অনলাইন ক্লাসে আগ্রহী ছিল না। যখন থেকে স্কুল খোলার বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তখন থেকেই এই অনলাইনে ক্লাস চালুর উদ্যোগ নেয়। সরকারের পক্ষ থেকেও আহ্বান জানানো হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অভিভাবকেরাও টিউশন ফি দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে চিত্র একই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু না করলেও বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস চালু করেছে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মতে, ইন্টারনেটের খরচ কমালে এই সুবিধার আওতায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ জানান, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মধ্যে রাখতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টেলিভিশনে পাঠদান চলছে। রেডিওতে পাঠদানের জন্য কন্টেন্ট তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া একটি নম্বর দেওয়া হবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা ফোন দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।