করোনাকালীন শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে কম সময় পড়াশোনা করছে। স্কুল খোলা থাকার সময়ে তারা যে পরিমাণ সময় পড়াশোনায় ব্যয় করত ছুটির মধ্যে সেটি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বিশ্বব্যাংকের করা এক অনলাইন জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে সরকারিভাবে টেলিভিশনে (সংসদ টিভি) ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জরিপকালে দেখা গেছে মাত্র অর্ধেক শিক্ষার্থী এসব ক্লাস থেকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।
এছাড়া সরকারিভাবে অনলাইন ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারছে মাত্র ২১ ভাগ শিক্ষার্থী। বাকি ৭৯ ভাগ এই ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়ে গেছে। ২ হাজারের ওপরে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ফোনে সাক্ষাত্কার নিয়ে এই জরিপটি করা হয়েছে। বাংলাদেশে করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার পর চলতি বছর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। কয়েক ধাপে এই বন্ধের সময় বেড়েছে। সর্বশেষ আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে প্রভাব পড়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থীর ওপর। দীর্ঘ এই ছুটিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২৯ মার্চ থেকে সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাস চালু হয়েছে।
এছাড়া ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা ভার্চুয়াল মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখার চেষ্টা চলছে। সরকারি পোর্টাল শিক্ষক বাতায়নের মাধ্যমে তাদের আগে থেকে রেকর্ড করা কনটেন্ট ইউটিউবে দেওয়া হয় এবং শিক্ষার্থীদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়। অনেক শিক্ষক নিজেরাই কনটেন্ট তৈরি করে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচার করেন। কিন্তু ইন্টারনেট সেবার বাইরের শিক্ষার্থীরা এসব থেকে বঞ্চিত।
‘টিভি বেজড লার্নি ইন বাংলাদেশ:ইজ ইট রিচিং স্টুডেন্ট?’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, মে মাসের ১৮ তারিখ হতে জুন মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত নবম শ্রেণির ২ হাজার ১৮১ জন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে ফোনে এই সাক্ষাত্কারগুলো নেওয়া হয়। ঢাকা ও ময়মনসিংহের এই পরিবারগুলোর মাত্র ১৫ শতাংশের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। এজন্য টেলিভিশন শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জরিপকালে দেখা গেছে মাত্র ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর টেলিভিশন দেখার সুযোগ রয়েছে। সংসদ টিভি দেখার সুযোগ রয়েছে আরো কম, মাত্র ৩৯ শতাংশের।
জরিপকালে পরিবারগুলোর অবস্থাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, এসব শিক্ষার্থীদের ৬৫ শতাংশ পরিবারের আয় করোনাকালীন সময়ে কমে গেছে। ২৮ শতাংশ পরিবারের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ এ সময় কমেছে। করোনার প্রভাবে শুধু বাংলাদেশই নয়, সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে বিকল্প নানা উপায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অনলাইন ভার্চুয়াল পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রান্তিক পর্যায়ে এই সুবিধা পৌঁছানো যাচ্ছে না। তবে আশার বিষয় হলো—পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে সচেতন দেখা গেছে। জরিপকালে ৯০ ভাগ পরিবারের মধ্যে এই সচেতনতা দেখা যায়। অনেক শিক্ষার্থীর মায়েরা পর্যাপ্ত শিক্ষিত না হয়েও সন্তানদের সহায়তা করার চেষ্টা করছেন। তবে পর্যাপ্ত শিক্ষিত না হওয়ায় অর্ধেক পরিবারের অভিভাবকরা সন্তানদের এই সহায়তা করতে পারছেন না।
করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাচ্ছে না কিন্তু এ সময়টা তারা কী করছে, সেটিও জানার চেষ্টা করা হয় জরিপকালে। এতে দেখা যায়, ৫২ ভাগ শিক্ষার্থী আগের চেয়ে এক ঘণ্টা বেশি সময় পরিবারের গৃহস্থালি কাজে ব্যয় করছে। শিক্ষা বহির্ভূত খেলাধুলা, সামাজিক যোগাযোগেও সময় ব্যয় করছে অনেকেই।