অনলাইনের সুযোগ নেই মফস্বলে, তবু একাদশে ক্লাস শুরু কাল - দৈনিকশিক্ষা

অনলাইনের সুযোগ নেই মফস্বলে, তবু একাদশে ক্লাস শুরু কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইনে ক্লাস হলেও গ্রামের স্কুল-কলেজে তেমনভাবে হচ্ছে না। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিউশন ফি আদায় করতে এবং শিক্ষা প্রশাসনের নির্দেশনা মানতে অনেকটা নামকাওয়াস্তে অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে আছে। এই অবস্থায় কাল রোববার থেকে একাদশ শ্রেণিতে নতুন ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের ক্লাসও অনলাইনে নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু মফস্বলের কলেজগুলো বা শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে তেমন কোনো প্রস্তুতিই নেই। আবার মফস্বলের যেসব শিক্ষার্থী ঢাকার কলেজগুলোতে ভর্তি হয়েছে, তাদেরও গ্রামে বসে অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ নেই।

বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে দৈনিক শিক্ষার প্রতিনিধিরা জানান, গ্রামের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের স্মার্টফোন বা অনলাইন ক্লাসের জন্য অন্য কোনো ডিভাইস নেই। ফলে প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হওয়ার উপায় নেই। ইন্টারনেটের উচ্চদাম ও গতি দুর্বল থাকায় অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া মফস্বলের শিক্ষকরাও তথ্য-প্রযুক্তিতে খুব একটা দক্ষ নয়। এমনকি অনেক শিক্ষকেরই স্মার্টফোন নেই। ফলে মফস্বলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইন ক্লাস অনেকটা নির্দেশনার মধ্যেই বন্দি হয়ে আছে।

মূলত মে মাস থেকেই শহরাঞ্চলের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে ক্লাস শুরু করে, কিন্তু শহরাঞ্চলের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও তাদের কেউ কেউ আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু করে। ফলে এখনো বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাসের বাইরে রয়ে গেছে, তবে টেলিভিশন ও রেডিওতে প্রাথমিক-মাধ্যমিকের ক্লাস প্রচার করা হলেও সেগুলোতে শিক্ষার্থীদের খুব একটা আগ্রহ নেই।

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার বঙ্গবন্ধু কলেজের একজন শিক্ষক জানান, তার কলেজের ১০ শতাংশ মেয়ের ফোন আছে, যার বেশির ভাগই বাটন ফোন। আর ২০ শতাংশ ছেলের স্মার্টফোন আছে। কলেজের বেতন ২০০ টাকা, সেটাই তারা দিতে পারছে না। একাদশে এবার তাদের ৪০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, তাদেরও আমরা অনলাইন ক্লাস শুরু করা হবে, কিন্তু অবস্থা আগের মতোই হবে বলে মনে করছেন তিনি। 

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীরই স্মার্টফোন নেই। এ ছাড়া নিয়মিত বিদ্যুৎও থাকে না। সাধারণ সময়েই শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্লাসে আনতে হয় আর অনলাইনে ক্লাসের ব্যাপারটি তো আমাদের বলারই সুযোগ নেই। এ ছাড়া আমাদের স্কুলে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও অনেক বিষয়ের শিক্ষক নেই। মোট ১৪ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র সাতজন। এমনকি গণিতের কোনো শিক্ষক নেই। এই অবস্থায় অনলাইন ক্লাস আমাদের জন্য বিলাসিতা। বিষয়টি আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরকেও জানিয়েছি।’

ওই উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেসা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অবস্থাও একই। তবে এখানে শিক্ষকের অবস্থা আরো করুণ। ১৪ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও আছেন মাত্র তিনজন।

টাঙ্গাইলের উপজেলা পর্যায়ের একটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করে  বলেন, তাঁরা কাগজে-কলমে অনলাইন ক্লাসের নির্দেশনা মানছেন। ইন্টারনেটের অবস্থা এত খারাপ যে নেটওয়ার্কই পাওয়া যায় না। ৮০ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন নেই। জুমে কয়েক দিন ক্লাস করানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শিক্ষার্থী পাননি। আবার কোনো শিক্ষার্থীর আগ্রহ থাকলেও তারা নেটওয়ার্ক পায় না। তবে তাঁরা ইউটিউবে কিছু ক্লাস আপলোড করছেন, কিন্তু সেটা তাঁদের কলেজের খুব কম শিক্ষার্থীই দেখছে। একাদশ শ্রেণিতেও হয়তো কাগজে-কলমে ক্লাসের ব্যাপারটি দেখাতে হবে। বাস্তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

জানা যায়, করোনাকালে শিক্ষাব্যবস্থায় বিরাট বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রাম-শহর ও ধনী-দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। শহরের শিক্ষার্থীরা টেলিভিশনের ক্লাস না দেখলেও অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস করছে। এমনকি পরীক্ষাও দিচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও স্কুল-কলেজের অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি ধনী পরিবারের সন্তানরা অনলাইন বা সরাসরি প্রাইভেট পড়ছে। এতে তারা পুরো সিলেবাসই শেষ করতে পারছে। অন্যদিকে গ্রামের ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা এসব সুবিধার বাইরে রয়েছে। ফলে শিক্ষায় বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের বসে থাকার সুযোগ নেই। তাই একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাদের পক্ষে সম্ভব হবে তারাই এই ক্লাস করবে। তবে আমি সব কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব, তারা যেন ক্লাসগুলো ইউটিউব বা ওয়েবসাইটে আপলোড করে, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনমতো সময়ে ক্লাসগুলো দেখতে পারে।’

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040740966796875