অবশেষে অনশন ভাঙলেন জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। সোমবার (২৯শে জানুয়ারি) বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর ও অতিরিক্ত সচিব মো: মহিউদ্দিন খান জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান।
অনশন ভঙ্গ হওয়ার পর প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষক নেতা নজরুল ইসলাম রনি দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে ৫ শতাংশ বৈশাখী ভাতা ও ইনক্রিমেন্টের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে এমন আশ্বাসে আমরা অনশন স্থগিত করে ক্লাসে ফিরে যাচ্ছি।’
‘এছাড়া আমাদের জাতীয়করণের দাবি প্রধানমন্ত্রী আগামী বাজেটে দেখবেন বলে আশ্বাস পেয়েছি।’
পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখী ভাতা প্রদানের আশ্বাস দেয়ায় তিনি বেসরকারি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান শিক্ষকরা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১০ থেকে ১৪ই জানুয়ারি পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচির পর ১৫ই জানুয়ারি থেকে অনশন শুরু করেন শিক্ষকরা। এরই মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটও পালন করেন তারা।
মান বিবেচনা ও নীতিমালার ভিত্তিতে জাতীয়করণ হবে– জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ১৭ই জানুয়ারির বক্তৃতার আলোকে অনশন ভঙ্গ করানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ভিত্তিতে রাজপথ ছেড়ে ক্লাসে ফিরে গেলেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
একাধিক সূত্রমতে, ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রোববার (২৮ জানুয়ারি) শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে নানা কথা হয়। সংসদের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও শিক্ষকদের দিনের পর দিন প্রেসক্লাবের অবস্থান করার বিষয়টি জোরালোভাবে আলোচনা হয়। পহেলা ফেব্রুয়ারি এস এস সি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। পরীক্ষা নিয়ে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়েও কথা হয়। সভার আলোচনার আলোকে শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলা হয়। শিক্ষক নেতৃবৃন্দের দাবি ছিল অন্তত মন্ত্রণালয়ের কোনও কর্মকর্তা যেন অনশন ভাঙান এবং ক্লাসে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। সেমতে সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অনশন ভাঙাতে সোয়া পাঁচটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শিক্ষকদের অনশন ভাঙান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ফোরামের আহ্বায়ক আব্দুল খালেক, উপদেষ্টা আবুল বাশার হাওলাদার, অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম, মো: রফিকুল ইসলাম মন্টু, মোঃ রফিকুল ইসলাম, মোঃ শাহ আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক জি এম শাওন, মো: আব্দুস ছালাম খান, মো. সাইদুল হাসান সেলিম, মোঃ জসিম উদ্দিন, মোঃ মোস্তফা ভূইয়া, সমন্বয়ক ড. ইদ্রিস আলী, প্রেস সচিব মো. এনামুল ইসলাম মাসুদ।
এর আগে সাড়ে চারটার দিকে কয়েকজন শিক্ষক নেতা শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর দপ্তরে সাক্ষাত করতে যান।
অনশন ও ধর্মঘটে প্রাপ্তির হিসেব-নিকেশ নিয়ে নানারকম মত দেখা যায়। দৈনিকশিক্ষায় পাঠানো সিরাজগঞ্জের কাজীপুর মাইজবাড়ির আবদুল লতিফের মন্তব্য এরকম: ‘ আমি প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়করনের দাবীতে ৫ দিন অনশন করেছি তাতে যা বুঝেছি তা হলো —- সারা বাংলাদেশের প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান থেকে যদি একজন করে শিক্ষকও প্রেসক্লাবের সামনে আসতেন তবে আশেপাশের রাস্তা ব্লোক হয়ে যেত, তখন সরকার বাধ্য হতো দাবী মানতে ৷ কিন্তু দেখা গেল যে, খুবই অল্প সংখ্যক শিক্ষক আন্দোলন করছে আর বাকীগুলো বাড়ীতে বসে সুখ করছে৷ এভাবে আন্দোলন করলে মুলা ছাড়া কিছু পাওয়ার কথা না ৷ তাই অবশেষে মুলাই পেলাম ৷’
আরও পড়ুন: মান বিবেচনায় এমপিওভুক্তি ও জাতীয়করণ: প্রধানমন্ত্রী(ভিডিও)