প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া আশ্বাসের ওপর বিশ্বাস রেখে আমরণ অনশনরত শিক্ষকদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার। ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতারা মঙ্গলবার (১০ জুলাই) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেলে তিনি এ পরামর্শ দেন। ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: অনশনরত চার শিক্ষক নেতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে
গত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অনশনরত শিক্ষকদের এমওিভুক্তির আশ্বাস দেয়া হয়। ওই আশ্বাস পেয়ে অনশন স্থগিত করে শ্রেণিকক্ষে ফিরে গিয়েছিলেন শিক্ষকরা। কিন্তু নতুন বাজেটে কোনও অর্থ বরাদ্দ না রাখা এবং নতুন এমপিও নীতিমালা চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ফের অনশন শুরু করেন শিক্ষকরা। এমপিওভুক্তির দাবিতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলনরত ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের চার নেতা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে যান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তার টেলিফোন পেয়ে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায়ের নেতৃত্বে মঙ্গলবার (১০ জুলাই) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান তারা।
অন্য তিন নেতা হলেন ফেডারেশনের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো: আনোয়ার হোসেন, সহসভাপতি অধ্যক্ষ মো: আব্দুল হামিদ ও প্রচার সম্পাদক ফিরোজ আহম্মেদ।
এমপিওভুক্তির দাবিতে ননএমপিও শিক্ষকরা গত ১০ জুন থেকে প্রেসক্লাবের বিপরীত পাশের সড়কে লাগাতার অবস্থান নেন। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সরকার থেকে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় ২৫ জুন থেকে তাঁরা আমরণ অনশন করছেন। এমনকি পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজও তারা রাজপথে আদায় করেন। মঙ্গলবার অনশনের ১৬ দিন অতিবাহিত করছেন শিক্ষকরা।
অনশনে অংশ নেয়া শিক্ষকরা বলেন, সারা দেশে প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর ৮০ হাজার শিক্ষক কর্মচারী বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে আসছেন। তারা পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণ, চিকিৎসা দিতে না পেরে নিজেরাই বোঝা হয়ে গেছেন। অপরদিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও নেই। একটি স্বাধীন দেশে জাতি গড়ার কারিগররা সরকারের অবিবেচক সিদ্ধান্তের কারণে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ রাষ্ট্র নীরব, মনে হচ্ছে এ শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই।
বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৫ লাখ। তাদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া ননএমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরে আছে ২ হাজারেরও বেশি ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলে এবং ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করলে মাসে আরও প্রায় দেড়শ কোটি টাকা খরচ হবে। যদিও সরকারের পরিকল্পনা হলো হাজারখানেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা।