নতুন এমপিও নীতিমালার একটি অনুচ্ছেদের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সারাদেশের কলেজগুলোতে শুরু হয়েছে নতুন অপকর্ম। প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স স্তরে নিয়োগকৃত শিক্ষকদেরকে ডিগ্রি (পাস) স্তরের তৃতীয় শিক্ষক আবার অনেক ক্ষেত্রে ডিগ্রি (পাস) স্তরের শিক্ষক (দ্বিতীয়) হিসাবে পদ সমন্বয় করছে। আর এ্ই সমন্বয়ের বিনিময়ে চলছে টাকার খেলা। এমপিওভুক্তির আশায় শিক্ষকরাও টাকা দিচ্ছেন অনায়াসে। রাজশাহী, দিনাজপুর, পাবনা ও গাইবান্ধার কয়েক ডজন কলেজের গভর্ণিংবডি তথ্য গোপন করে পদ সমন্বয় করে এমপিওভুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। এদের মধ্যে আবার অনেকে আছেন যাদের বিষয় স্নাতক (সম্মান) বা স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য নিয়োগকৃত হলেও তাদের বিষয় অধিভুক্তই হয়নি। অর্থাৎ তাদের যে উদ্দেশ্যে প্রথমে নিয়োগ করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্যই পূরণ হয়নি। ওই বিষয় চাপা রেখে আরেক বিষয়ে চলে যাচ্ছেন তারা। কিন্তু এসব শিক্ষকরা যখন এমপিওভুক্তির আবেদন করছেন তখন প্রকৃত সত্যের মুখোমুখি হচ্ছেন। দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জানা যায়, এসব শিক্ষকদের এমপিও ভুক্ত করা হচ্ছে না। অধিদপ্তর থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনার্স-মাস্টার্স স্তরে নিয়োগকৃত শিক্ষকদেরকে ডিগ্রী (পাস) স্তরে সমন্বয়ের কোন সুযোগ নেই। তৃতীয় শিক্ষকের সংজ্ঞায় অনার্স-মাস্টার্স স্তুরের শিক্ষকরা নেই।
জানা যায়, সারাদেশে শত শত স্নাতক(পাস) কলেজে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব শিক্ষকরা নিয়মিত স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। যেমনটা করেন উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) স্তরের শিক্ষকেরা। তবে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) স্তরের শিক্ষকরা এমপিও ভুক্ত হলেও স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতককোত্তর পর্যায়ের শিক্ষকরা এখনো এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ সামান্য সম্মানি থেকে দিয়ে থাকেন এবং তা নিয়েই খুশী থাকতে হয়। অর্থ সংকটের অজুহাতে কোনও কোনও কলেজ সেটাও নিয়মিত দেন না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, এমপিও নীতিমালায় স্পষ্ট বলা হয়েছে স্কুলে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি (পাস) স্তরে বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত নয় এমন একই বিষয়/পদে শিক্ষক/কর্মচারীগণকে প্যাটার্নভুক্ত শূন্যপদের বিপরীতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সমন্বয় করতে হবে। সেখানে কেমন করে অর্নাস-মাস্টার্সের শিক্ষকদের সমন্বয় করা হয় ? বৈধভাবে কোনও সুযোগ নেই। অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত না হওয়ার আহ্বানা জানান তিনি। একই সঙ্গে এমপিওর বিধান পরিবর্তন করে অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবি জানান মাজহারুল হান্নান।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ পরিচালক মোহাম্মদ শামছুল হুদা বলেন, ‘তৃতীয় শিক্ষকদের সংজ্ঞায় অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষকরা পড়েন না। যদি কেউ তথ্য গোপন করে কিংবা অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত হন তাদের এমপিওভুক্তি বাতিল এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নীতিমালায় যা আছে: ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে সর্বশেষ জারিকৃত এমপিও নীতিমালার ৯ : পদ সমন্বিতকরণ- এর (ii) অনুচ্ছেদে হয়েছে “এ জনবলকাঠামো অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মচারীর প্রাপ্যতা নির্ধারণের পর কোন প্রতিষ্ঠানে বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ প্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা যদি প্রাপ্যতার অতিরিক্ত হয়, তবে অতিরিক্ত পদসমূহ উদ্বৃত্ত বলে বিবেচিত হবে। এরুপ উদ্বৃত্ত পদে বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত অতিরিক্ত জনবল থাকলে তারা বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ পেতে থাকবেন। এসকল পদ শূন্য হলে উক্তপদে নতুনভাবে আর নিয়োগ দেয়া যাবে না।
তবে প্রথমত: প্যাটার্নভুক্ত পদ কোন কারনে শূন্য হলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষগত যোগ্যতার ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত উদ্বৃত্ত পদ হতে উক্ত পদে শিক্ষক/কর্মচারী সমন্বয় করতে হবে (প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহ-প্রধান পদ ব্যতীত)।
দ্বিতীয়ত: এমপিও ভুক্ত উদ্বৃত্ত পদের শিক্ষক-কর্মচারীদের সমন্বয়ের পর অবশিষ্ট শূন্যপদে স্কুলে নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি (পাস) স্তরে বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত নয় এমন একই বিষয়/পদে শিক্ষক/কর্মচারীগণকে প্যাটার্নভুক্ত শূন্যপদের বিপরীতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সমন্বয় করতে হবে। উদ্বৃত্ত পদের শিক্ষক-কর্মচারীদের সমন্বয় করা সম্ভব না হলে জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা মোতাবেক প্যাটার্ণভুক্ত শূন্যপদে শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যাবে এবং তারা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন।