অনিয়মে ডুবছে মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ - দৈনিকশিক্ষা

অনিয়মে ডুবছে মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

লুবনা আক্তার এসএসসি ও এইচএসসিতে তৃতীয় শ্রেণিতে পাস। স্নাতকেও নামমাত্র পাস (বিএ-পাস)। সরকারি নিয়মে তাঁর শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ারই কথা নয়। কিন্তু তিনি এখন এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে সরকার থেকে মাসে মাসে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। রোববার (২০ অক্টোবর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়মের এমন বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। বছরের পর বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি; আবার অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদে পূর্ণ দায়িত্ব না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো হচ্ছে। এসব পদেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের যখন খুশি তখন পরিবর্তন করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষকদের মধ্যে ভেতরে-ভেতরে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে।

আর এসব কারণে একসময়ে ভালো ফল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এসএসসি পরীক্ষার ফল ধারাবাহিকভাবে খারাপ হচ্ছে। ২০১৪ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ (‘এ’ প্লাস) পেয়েছিল ১ হাজার ১৩০ জন শিক্ষার্থী। সেটা প্রতিবছর কমতে কমতে চলতি বছর জিপিএ-৫ পায় ২২৫ জন। যদিও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিনা শামসী দাবি করেন, আশপাশে একাধিক ভালো প্রতিষ্ঠান থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকে একপর্যায়ে চলে যায়। এরপরও তাঁরা ভালো করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়মের বেশির ভাগ অভিযোগই বর্তমান পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে। এ জন্য দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। একটি কমিটির প্রধান হলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন এবং আরেকটির প্রধান মাউশির উপপরিচালক (শারীরিক শিক্ষা) আকতারুজ্জামান ভূঁইয়া। আকতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করতে পারবেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাখা মতিঝিল কলোনিতে অবস্থিত, আরেকটি শাখা ক্যাম্পাস বাসাবো এলাকায়। বর্তমানে ১১ হাজার ৩০০–এর কিছু বেশি শিক্ষার্থী পড়ছে। মোট শিক্ষক প্রায় আড়াই শ।

প্রতিষ্ঠানতে প্রায় ১০ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন। তিনি অবশ্য অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি দাবি করেন, একটি পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে যাচ্ছে।

নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত নিয়ে ঘাপলা

নথিপত্রে দেখা যায়, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটিতে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রথমে একজন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। পরে নিয়োগ পরীক্ষার সময় আরও একটি পদ বাড়ানো হয়। কিন্তু নিয়োগ দেওয়া হয় তিনজনকে। এর মধ্যে জিয়াউল হক নামে একজন বিধি অনুযায়ী প্রথম হওয়ায় তাঁর নিয়োগটি অনুমোদন করে তৎকালীন পরিচালনা কমিটি। ওই কমিটি আরও দুজনকে নিয়োগ দিলেও বলেছিল, বিধি অনুযায়ী নিয়োগ না হওয়ায় এই দুজন সরকারি অনুদানের (এমপিওভুক্ত) জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তাঁরা কেবল প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া বেতনের অংশটুকু পাবেন। এর মধ্যে লুবনা আক্তার এসএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত তৃতীয় শ্রেণি পাস। আর ফাতেমা আক্তার এইচএসসি ও স্নাতকে তৃতীয় শ্রেণি পাস। কেবল এসএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগে পাস। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান পরিচালনা কমিটি এই দুজনকেই নানা ‘কায়দা’ করে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে এমপিওভুক্ত করিয়েছেন। তবে এই তিনজনের মধ্যে বৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া জিয়াউল হক এখনো এমপিওভুক্ত হতে পারেননি।

একাধিক শিক্ষক বলেছেন, গত ১০ বছরে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন প্রায় ১৫০ জন। এসব নিয়োগের অনেকগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলেও প্রতিষ্ঠানের একজন সাবেক অভিভাবক প্রতিনিধি শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেছেন। প্রথমে অস্থায়ী ভিত্তিতে এবং পরে স্থায়ী করার আশ্বাস দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অবশ্য শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিনা শামসী। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিকে তাদের চাওয়া অনুযায়ী তথ্য দেওয়া হয়েছে।

খেয়ালখুশিমতো দায়িত্বে পরিবর্তন

বর্তমান পরিচালনা কমিটির কৌশল হলো ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালানো। এ জন্য ঠুনকো অজুহাতে বিভিন্ন পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এভাবে দায়িত্বপ্রাপ্তদের পদগুলো ঝুঁকিতে রাখা হয়।

একাধিক শিক্ষক বলেন, বর্তমান সভাপতি আওলাদ হোসেন প্রায় ১০ বছর ধরে এই দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই তৎকালীন অধ্যক্ষ এ এ এম তালিবুর রহমানকে সরিয়ে দেন। এরপর অন্য এক শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে সেলিনা শামসীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওযা হয়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে সরে যেতে হয়। তখন এমদাদুল করিম নামে এক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়। কিছুদিন পর আবারও সেলিনা শামসীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, যিনি এখনো এই পদে আছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে তাঁর চেয়ে জ্যেষ্ঠ একাধিক শিক্ষক রয়েছেন।

শুধু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষই নয়, শাখাপ্রধানের পদগুলোও নড়বড়ে করে রাখা হয়েছে। বাসাবো ক্যাম্পাসে প্রভাতি শাখায় সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব আছেন জেবুন্নেসা। প্রথমে তাঁকেও এক দফায় সরিয়ে দেওয়ার পরে আবার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঠুনকো অজুহাতে ওই ক্যাম্পাসের দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক মুসলেহ উদ্দিনকে বরখাস্ত করে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মুসলেহ উদ্দিন মামলা করে জেতার পরও দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

মতিঝিলের মূল ক্যাম্পাসের একটি শাখায় কেবল পূর্ণ দায়িত্বে আছেন একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক। সেখানকার আরেকটি শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহনাজ আক্তারকে বরখাস্ত করে শহীদুল ইসলাম আবেদীনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে চালু হওয়া প্রাথমিক স্তরেও একই অবস্থা। প্রাথমিকের প্রভাতি শাখায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান করা হয়েছে শিক্ষাজীবনে তিনটিতেই তৃতীয় শ্রেণি থাকা লুবনা আক্তারকে। তাঁকেও একবার প্রভাতি শাখা থেকে সরিয়ে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিকের দিবা শাখায় দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখাপ্রধান ছিলেন আনিসুল ইসলাম। তাঁকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে সরিয়ে দিয়ে আরেক শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাসাবো ক্যাম্পাসেও প্রাথমিকের শাখাপ্রধানের দায়িত্বে ইচ্ছেমতো রদবদলের ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পরিচালনা কমিটি কৌশল করে পূর্ণ নিয়োগ না দিয়ে ভারপ্রাপ্তদের চাপে রেখে নিজেদের সুবিধামতো প্রতিষ্ঠান চালাতে পারে।

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007051944732666