আত্মহত্যার কথা বলতে গেলে একটি অতি প্রাসঙ্গিক বিষয় বলা দরকার যে, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি, এর অপব্যবহার, ব্ল্যাকমেলিং প্রভৃতি কারণকে আত্মহত্যা, অপমৃত্যু, অপঘাতে মৃত্যু, আত্মহননের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে দেখছেন সমাজবিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীরা। এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন ঘটেছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অরিত্রী অধিকারী। আসলে অরিত্রীর মৃত্যুর জন্য কে দায়ী? অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত আসক্তি ও আধুনিকতাকেই দায়ী করছেন। নৈতিকতা সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত। সে পরিবেশ হতে পারে ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাষ্ট্রীয় পরিবেশ। নৈতিকতা সম্পর্কে একজন মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গিও থাকতে হবে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সে দৃষ্টিভঙ্গির ওপর এক সময় পরিবেশের প্রভাব পড়ে।
জীবনের কোনো পরিস্থিতিতে কেউ যাতে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আত্মহননের পথ বেছে না নেয়, সে দিকে সবার নজর রাখতে হবে। ওই বিনাশী পথ থেকে পরিত্রাণে পরিবারের, সমাজের, রাষ্ট্রের দায় আছে। প্রয়োজন পারিবারিক, সামাজিক বন্ধন ও ধর্মীয়-নৈতিক মূল্যবোধ অটুট রাখা। প্রতিদিন অকাতরে প্রাণ ঝরছে নানা কারণে। হত্যার চেয়ে আত্মহত্যার প্রবণতাই বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক অবক্ষয়, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, যৌথ পরিবার বিলুপ্তি, সামাজিক এবং পারিবারিক বন্ধনে ফাটল, একঘেয়ে জীবনযাপন, একাকীত্ব, হতাশা, দুশ্চিন্তা, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নিগৃহীত হওয়া, অসৎ সঙ্গে মেলামেশা থেকে ধীরে ধীরে তরুণরা বিপথগামী হন।
এক সময় বিপদের চরমতম সীমায় পৌঁছেন তারা। পরিণামে আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে এই হতাশা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পান অনেক সময়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এভাবে আত্মহননের মধ্য দিয়ে একজন মানুষের চিরবিদায় কখনো প্রত্যাশিত হতে পারে না। কারণ প্রতিটি জীবনেরই মূল্য আছে। প্রতিটি মানুষ, সমাজে, সংসারে, দেশের উন্নয়নে, অর্জনে এগিয়ে যাওয়ার পথযাত্রায় কোনো না কোনো ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন। তরুণেরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তরুণেরা কীভাবে গড়ে উঠছে, কীভাবে বেড়ে উঠছে, কীভাবে ও কী শিক্ষা গ্রহণ করছে তার ওপর নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কী হবে? সে রাষ্ট্র প্রতিযোগিতামূলক এ বিশ্বে উত্তীর্ণ হবে, নাকি পিছিয়ে পড়বে? নাকি স্থবির হয়ে পড়ে থাকবে? সে কারণেই তরুণ প্রজন্ম নিয়ে, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার নীতি-নৈতিকতা নিয়ে ভাবতে হবে অভিভাবকদের।আর সে জন্য চাই নিজ নিজ ধর্মীয় নৈতিক মূল্যবোধ অটুট রাখা।
লেখক : সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান), বাকলজোড়া নয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]