বরগুনার পাথরঘাটায় শখের বশে ট্রলারে করে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে হারিয়ে যাওয়া স্কুলছাত্র ইমরান (১৪) ফিরে এসেছে। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ১৭২ দিন পর বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে তাকে। এসময় ইমরানের বাবা ও স্বজনরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে বেনাপোল থানার মাধ্যমে ইমরানকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমরান মডেরখাল এলাকার মো. এছাহাক খানের ছেলে। তার মায়ের নাম আসমা বেগম।
জানা যায়, পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের মঠেরখাল গ্রামের এসমাইলের মালিকানাধীন একটি ট্রলার গত বছরের ২৩ আগস্ট সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যায়। পরদিন সমুদ্র থেকে মাছ শিকার করে ঘাটে ফিরে আসার পথে বলেশ্বর নদের মোহনায় হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি। এসময় শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই ইমরান ট্রলার থেকে পড়ে সমুদ্রে ভেসে যায়।
পরে পরনের লুঙ্গি ফুলিয়ে পাঁচ দিন ভেসে থাকার পর ভারতীয় জেলেদের নজরে আসলে তারা তাকে উদ্ধার করে পশ্চিমবঙ্গের রায়দিঘি থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে স্থানীয় রায়দিঘি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় তাকে।
সেখান থেকে ভোলাহাট থানার নূর আলী মেমোরিয়াল সোসাইটি নামে একটি শিশু যত্ন ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে রাখা হয়। বাংলাদেশে ফেরার আগ পর্যন্ত ইমরান সেখানেই ছিল।
দীর্ঘ আইনি বেড়াজাল ও কূটনৈতিক যোগাযোগের পর গতকাল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ বেনাপোল সীমান্তে বিজিবির কাছে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে হস্তান্তর করে ইমরানকে। সেখান থেকে ইমরানের বাবা ও স্বজনরা তাকে বেনাপোল থানার মাধ্যমে গ্রহণ করে।
এর আগে ইমরানের সন্ধান না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে গত বছরের ৩১ আগস্ট রাতে পাথরঘাটা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল।
ইমরানের বাবা এছাহাক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে পেয়ে খুশি। ওর খবর শুনে তো পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমার ছেলেকে দেশে আনার জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বরগুনার জেলা প্রশাসক, ট্রলার মালিক সমিতিসহ তার স্বজনরা তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করেছেন।’
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ ইমরানের বেঁচে থাকাকে অলৌকিক এবং ভালোবাসা দিবসে দেশে ফেরা দুই প্রতিবেশী দেশের জনগণের ভালোবাসা বলে অভিহিত করেন।