অবসর ও কল্যাণ সুবিধা : নিজের টাকা পেতে ত্রাহি অবস্থা - দৈনিকশিক্ষা

অবসর ও কল্যাণ সুবিধা : নিজের টাকা পেতে ত্রাহি অবস্থা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ষাটোর্ধ্ব মো. আফসার আলী অবসর সুবিধার টাকা কবে পাবেন, তার খোঁজখবর নিতে এসেছিলেন সিরাজগঞ্জ থেকে। তিনি শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী  শিক্ষক ছিলেন। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে অবসরে গেছেন, কিন্তু এখনো অবসর সুবিধার টাকা পাননি। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত ঢাকার খিলক্ষেতের একটি বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আমিনুল হক এসেছিলেন অবসর কল্যাণ সুবিধার টাকার খোঁজ নিতে। বললেন, এই টাকা পেলে চিকিৎসা করাতে পারতেন।

রাজধানীর নীলক্ষেত ও পলাশীর মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো ভবনে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট কার্যালয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমন আসা-যাওয়া নিত্যদিনের ঘটনা। গত বুধবার সেখানে কথা বলে জানা গেল, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পেতে এমন ত্রাহি অবস্থা।

এই খাত থেকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীরা যে অর্থ পান, তার বড় অংশই তাঁদের বেতন থেকে জমা রাখা হয়। এখন নিজেদের অর্থ পেতে কমপক্ষে আড়াই বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আর দেড় বছরের আগে পাওয়া যায় না কল্যাণ সুবিধার টাকা। অনলাইনে আবেদন নিয়ে শিক্ষকদের ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু শিক্ষকেরা বলেছেন, আবেদনে নানা সমস্যা থাকে বলে বোর্ড থেকে জানানো হয়।  ফলে তাঁদের অনেককেই ঢাকায় আসতে হয়।

২০০২ খ্রিষ্টাব্দে আইন করে অবসর ও কল্যাণ সুবিধা বোর্ড গঠন করা হয়। এমপিওভুক্ত (বেতন বাবদ মাসে সরকারি অনুদান) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরের পর দুই ধরনের সুবিধা পান। একটি অবসর সুবিধা, আরেকটি কল্যাণ সুবিধা। পরিমাণে অবসর সুবিধার টাকা বেশি। নিয়মা নুযায়ী বয়স ৬০ বছর অথবা চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরে যান। তবে কেউ মারা গেলেও নির্ধারিত পরিমাণে টাকা পাবেন। আবার অন্তত ১০ বছর পূর্ণ করে স্বেচ্ছায় অবসরে গেলে জমার টাকা সুদসহ পাবেন।

অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টসূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধার টাকা দেয়া হয়েছে। বর্তমান ১৯ হাজার ৭৩২ জন শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন জমা পড়ে আছে। আর কল্যাণ সুবিধার টাকা পেতে আবেদন জমা আছে ১৫ হাজার ১০০টি। এই খাতের  টাকা দেয়া হয়েছে সর্বশেষ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল পর্যন্ত।

অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, মূল সমস্যা হলো তহবিলের ঘাটতি। এটা ঠিক যে বিভিন্ন সময়ে সরকারের আর্থিক সহায়তায় সমস্যা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়।

বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর রয়েছেন। আগে অবসর ও কল্যাণ সুবিধার জন্য মাসে মূল বেতনের যথাক্রমে ৪ ও ২ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হতো। পরে তা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশ টাকা  করা হয়। যদিও এ নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের আপত্তি রয়েছে। অবসর সুবিধা বোর্ড সূত্র জানায়, অবসর সুবিধার জন্য 6 শতাংশ হারে টাকা কাটার পর বর্তমানে মাসে প্রায় ৬০ কোটি টাকা আদায় হয়। কিন্তু অবসর সুবিধা দিতে মাসে প্রয়োজনে ৮০ কোটি টাকা। বছরে ঘাটতি ২৪০ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবসর সুবিধা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, জমা আবেদন অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধার টাকা দিতে ২ হাজার টাকা দরকার। গত তিন অর্থবছরে সরকার ৭৮২ কোটি টাকা দিয়েছে, যার মাধ্যমে ৯ হাজার ৯৮৮ শিক্ষক-কর্মচারীকে অবসর ভাতা দেয়া হয়েছে। তাঁরা চাইছেন মুজিব শতবর্ষে ১২ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে অবসর ভাতা দিতে। এজন্য তাঁরা সরকারের কাছে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। 

অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্যসচিব শরীফ আহমেদ বলেন, তাঁরা আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগের মতো শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি সদয় হয়ে এবারও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেবেন।

দুর্ভোগ কম নয় কল্যাণেও

কল্যাণ সুবিধা খাতে বর্তমানে মাসে জমা হয় ৪০ কোটি টাকা। কিন্তু মাসে প্রয়োজন ৫০ কোটি টাকা। বছরে ঘাটতি ১২০ কোটি টাকা। আবেদন জমা থাকা ১৫ হাজার ১০০ জনকে কল্যাণ সুবিধা দিতে এককালীন ৮৫০ কোটি টাকা দরকার। বিভিন্ন অর্থবছরে এই খাতে সরকার ৩৬০ কোটি টাকা দিলেও তা যথেষ্ট নয়। সংকট নিরসনে প্রতিবছর অতিরিক্ত ১২০ কোটি টাকা  প্রয়োজন।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুদান এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে কেটে নেয়া টাকা বাড়ানোর পর তাঁরা আশা করেছিলেন, কয়েক মাসের মধ্যে সমস্যার সুরাহা হবে। কিন্তু বছরে ৫ শতাংশ বেতন প্রবৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হওয়ায় কল্যাণ সুবিধার মোট টাকাও বেড়েছে। ফলে এই সমস্যার সমাধান করার জন্য বছরে স্থায়ী বরাদ্দ দিতে হবে। 

শিক্ষকদের কষ্টের শেষ কোথায়

ময়মনসিংহের ত্রিশালের ধুরধরিয়া আলিম মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আতহার আলী এসেছিলেন অবসর সুবিধার টাকার খোঁজ নিতে। তিনি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে অবসরে গেছেন। এরপর আবেদন করেন। কল্যাণ সুবিধার টাকা পেলেও এখনো অবসর সুবিধা পাননি। তিনি বলেন, ‘আমি আমি চাচ্ছিলাম, টাকাটা পেলে হজে যেতাম। হজের প্রাক্-নিবন্ধনও করে রেখেছি।’

যে মানুষগুলো সারা জীবন মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে সেবা দিয়ে গেছেন তাদের এখন জীবনের এই পর্যায়ে এসে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আছে হয়রানিও। রাজধানীর আরমানিটোলার আনন্দময়ী গার্লস হাইস্কুলের অবসরে যাওয়া শিক্ষক সুলতানা বলেন, অবসরের টাকা পেলেও কল্যাণের টাকা এখনো পাননি। খোঁজ নিতে এসে জেনেছেন, টাকা নাকি গিয়েছে, কী কারণে ফেরত এসেছে। আবার পাঠাবে।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050668716430664