অবসর-কল্যাণ তহবিল বিলুপ্ত করে শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় আনা হোক - দৈনিকশিক্ষা

অবসর-কল্যাণ তহবিল বিলুপ্ত করে শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় আনা হোক

মো. আবুল হোসেন |

বেসরকারি শিক্ষকদের হলো না ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন। চাকরির শেষে অবসরে গেলে যা সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় তাও আবার অতি নগণ্য। তাতে ও আছে দুটি ভাগ- একটি হলো অবসর ভাতা, অন্যটি কল্যাণ তহবিল। এ দুইয়ের সমন্বয়ে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় মাত্র ১০০ মাসের বেতনের সমতুল্য সর্বশেষ স্কেলের সমান টাকা।                             

স্বাধীনতার এত বছর পরও বেসরকারি শিক্ষকরা রয়ে গেলাম পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যা বেমানান। দেশ এগিয়ে চলছে উন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকরা কোনো সুফলই পাচ্ছেন না। তারা অভাব-অনটনের সাথে যুদ্ধ করে জীবন বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। কেউ কী বলতে পারেন, আমরা বেসরকারি শিক্ষকরা আর কতকাল অবহেলিত হয়ে জীবনযাপন করব?  

বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা না করেই আরও অতিরিক্ত ৪ শতাংশ চাঁদা কর্তন শুরু হয়ে গেল। কারিগরি শাখায় ইতোমধ্যে জানুয়ারি থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশসহ ১০ শতাংশ হারে চাঁদা কর্তন শুরু হয়েছে। অবসরে ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ তহবিলে ৪ শতাংশ হারে এ চাঁদা কাটা হচ্ছে। পূর্বে ৬ শতাংশ কাটা হতো। 

কিন্তু এখন যদি অতিরিক্ত ৪ শতাংশসহ সর্বমোট ১০ শতাংশ হারে কর্তন করা হয় তাহলে তার সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে ১৬৩ মাসের বেতনের সমতুল্য সর্বশেষ স্কেলের সমান; এটা আমাদের দাবি । আর তা না হলে শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় পূর্বের হারেই সুযোগ-সুবিধা বহাল থাকলে অতিরিক্ত চাঁদা কর্তনে বেসরকারি শিক্ষকদের লাভ কী?  

বাড়তি সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা না করলে বেসরকারি শিক্ষক সমাজ এই কর্তনকে নিন্দা জানাবে। যার কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় নেমে আসবে স্থবিরতা এবং দেখা দিবে শিক্ষক অসন্তোষ। যা ইতোমধ্যে শুরুও হয়ে গেছে। বেসরকারি শিক্ষকরা এক পা,  দু পা করে আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।  যা কোনো মতেই শিক্ষাব্যবস্থার জন্য কাম্য হতে পারে না। 

অবসর ও কল্যাণ তহবিলকে আপডেটসহ অবসরের সর্বনিম্ন বয়সসীমা ২০ বছর করার জোর দাবি জানাচ্ছি। সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থায় সমান সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত। কিন্তু আজ তা তিনটি ভাগে বিভক্ত- সরকারি, বেসরকারি, ননএমপিও। শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বিভাজন থাকলে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব হবে কীভাবে? অবসরে যাওয়ার পর ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে অবসর ও কল্যাণ তহবিলের টাকা এক মাসের মধ্যে প্রতিটি শিক্ষকের নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য নীতিমালা প্রস্তুত করার দাবিও বেসরকারি শিক্ষকদের। কেউ যদি পদত্যাগ অথবা অন্য কোনো কারণে চাকরি ছেড়ে চলে যান তাহলে তাকে আনুপাতিক হারে যা পাবেন তা যথাসময়ে পরিশোধ করতে হবে। 

দেখা যাচ্ছে, অনেকেই ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরি শেষ করতে পারে না। সেক্ষেত্রে অবসর ও কল্যাণ তহবিলের টাকা কত মাস পাবেন তার ওপর হিসাব করা হয়। এমনটা বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য কল্যাণকর নয়।  সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন। শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য রেখে উন্নত জাতি গঠন সম্ভব নয়। বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় আনতে হবে তাই আমূল পরিবর্তন। শিক্ষকদের অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন না করে আগে শিক্ষকদের সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে দেন।  

আমাদের বেতন থেকে আরও অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করে অবসরে যাওয়া ফাইলগুলোর সমাধান করতে হবে কেন? তাহলে আগে কি কর্তন করা হয়নি? এখন বেসরকারি শিক্ষক সমাজের মধ্যে এমন প্রশ্ন উঠেছে। এ সমস্যার সঠিক সমাধান চাই। পূর্বেই বেসরকারি শিক্ষকদের কাছ থেকে মূল স্কেলের ৬ শতাংশ হারে প্রতিমাসে কর্তন করা হতো। এই টাকা দিয়েই তো সকল সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত ছিল। তাহলে অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা ভোগান্তির শিকার হওয়ার কারণ কী? তাহলে কর্তনকৃত টাকা কোন খাতে খরচ করা হলো শিক্ষক সমাজ তা জানতে চায়। 

শিক্ষকদের কর্তনকৃত গচ্ছিত টাকা ফেরত দিতে অবসর ও কল্যাণ তহবিলে টাকার সংকট দেখা দিবে কেন? শিক্ষকদের কর্তনকৃত টাকা শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার পর সময় মতো যদি না পান তাহলে কর্তন করা হয় কেন? এই কর্তনকৃত টাকা সাথে সাথে পাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট বেসরকারি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি। 

প্রধানমন্ত্রী অবসর ও কল্যাণ তহবিলে টাকা দেওয়ার পরও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। প্রতিমাসে শিক্ষকদের বেতন থেকে টাকা কর্তন করা হচ্ছে; তাই সমস্যা থাকার কথা নয়। তবুও টাকার অভাবে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ফাইলের পর ফাইল জমা পড়ে যাচ্ছে কিন্তু তার সমাধান হচ্ছে না। কর্তনকৃত টাকা তাহলে কোথায় গেল শিক্ষক সমাজ তা জানতে  চায়।  

বেসরকারি শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর ফাইল পড়ে থাকে টাকার সংকটে তা কোনো মতেই মেনে নেয়া যায় না। শিক্ষকদের জমানো টাকা ওঠাতে সময় লেগে যায় বছরের পর বছর; যা অনেকেই আবার ভোগ করে যেতে পারেন না। তখন পরিবারে নেমে আসে সীমাহীন দুর্ভোগ। যা কোনো মতেই মেনে নেয়া যায় না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু পিছিয়ে পড়েছে বেসরকারি শিক্ষক ব্যবস্থা । এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা হওয়া উচিত। অবসরে যাওয়ার পর কোনো শিক্ষককে যেন মানবেতর জীবনযাপন করতে না হয় সে দিক বিবেচনা করা। বেসরকারি শিক্ষকরা যেন গচ্ছিত টাকা তুলতে পারেন সে ব্যবস্থা করা অতীব জরুরি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ এই যে, অবসর ও কল্যাণ তহবিলের প্রাণ সঞ্চার করতে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করি। আপনার দ্বারাই এ সকল সমস্যার সমাধান হবে; আমরা বেসরকারি শিক্ষকরা তা বিশ্বাস করি। 

লেখক: সহকারী শিক্ষক, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ এবং সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বাশিস (নজরুল)। 


এসএন/এফবি

পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046689510345459