‘সর্বনাশ হয়ে গেছে।টাকা নিয়ে গেছে।সরকার শিক্ষকদের বেতন থেকে টাকা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ধর, ধর, ধর। প্রথম সাজু-সাদীকে ধর। ধইরা ধইরা----। সরকারটাকেই ধর।’ ক’দিন ধরে এই চলছে কতিপয় শিক্ষকদের ফেসবুকে ও মুখে।
আমার প্রিয় শিক্ষকগণ,
ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন, তীর নিক্ষেপ করেন। এ আঘাত সয়, কিন্তু ফেসবুকে আপনাদের নিক্ষিপ্ত বাক্য আর শব্দের বিকশিত চেহারায় আমি ভূপাতিত। এককথায় ভয়াবহ। বাক্যবাণ নিক্ষেপকারীগণ আত্মপরিচিতি, বংশ পরিচিতি ও চারিত্রিক পরিচিতির জানান দিচ্ছেন।অভিধান বহির্ভূত শব্দের সদ্ব্যবহার করছেন।
শিক্ষকগণ,
কথা বলার স্বাধীনতার নাম বাক-স্বাধীনতা, মুখ দিয়ে খিস্তিখেউড় উচ্চারণ করাও কি বাক-স্বাধীনতা? গণতন্ত্র চর্চার অংশ? কবি নির্মলেন্দু গুণের “আমি স্বাধীনতা পেয়ে গেলে পরাধীন হতে ভালোবাসি” ধরণের স্বাধীনতা দিয়ে ফায়দা কী? “প্রেম এসে যাযাবর গলায় চুমু খেলেও ওরা বিরহ কাতর হয়ে গালাগাল করে সুখ পায়।”
আমরা জাতিকে শিক্ষা দিই, জ্ঞান দিই। আমরা পথ দেখাই।আমরা শিক্ষক। আমরা মেরুদণ্ড গড়ার কারিগর। ভাষারও কারিগর। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর উত্তরসূরী।আমরা এ প্রজন্মের সক্রেটিস, অ্যারিস্টটল, প্লেটো। আমরা গ্যালিলিও, নিউটন, আর্কিমিডিস।আমরা জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, মুনির চৌধুরী স্যার। আমরা তাদের উত্তরাধিকার। আহা, আমাদের সে-কী ভাষা!
এবার কী পেলাম, কী পাইনি? ৪ শতাংশের বীজগণিত
২২ হাজার টাকা স্কেল। অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন। প্রতি মাসে কাটা টাকা আটশ আশি টাকা। বছরে দশ হাজার ৫৬০ টাকা।৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ১টি যোগ হওয়ায় অর্থাৎ স্কেল তেইশ হাজার একশ টাকা হওয়ায় অবসর+কল্যাণ বৃদ্ধি পায় নিরানব্বই হাজার টাকা।
ঊনত্রিশ হাজার টাকা স্কেল। অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনে বছরে তের হাজার নয়শ বিশ টাকা। ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ১টি ধরে স্কেল হয় ত্রিশ হাজার চারশ পঞ্চাশ টাকা। এতে অতিরিক্ত বছরে পাই এক লাখ ত্রিশ হাজার পাঁচশ টাকা।
পঞ্চাশ হাজার টাকা স্কেল। ৪ শতাংশ কর্তনের বছরে চব্বিশ হাজার টাকা।
১টা ইনক্রিমেন্টে বায়ান্ন হাজার পাঁচশ টাকা স্কেল হওয়ায় অবসর কল্যাণে অতিরিক্ত পাই দুই লাখ পচিঁশ হাজার টাকা।
এরপরও ফেসবুক-সাহিত্যিকগণ (!) বিশেষ করে আমাদের দু’জনকে তিরস্কার, বকাঝকা নোংরা শব্দবাণে জর্জরিত করে চলছেন, রেহাই দিচ্ছেন না মাননীয় মন্ত্রী সচিবকেও।
প্রিয় শিক্ষকগণ আপনাদের এসব কর্মকাণ্ডে যদি প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়, যদি সিদ্ধান্ত নেয় অবসর ও কল্যাণের হিসাব করা হবে মূল বেতন স্কেল অনুযায়ী, তাহলে?
কতিপয় অপরিণামদর্শী নেতা শিক্ষকদের কোথায় নিয়ে যেতে চাইছেন?
আমরা এখন কি কি চাই:
এ বছর চাই পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, চাই বাড়ি ভাড়া। আদায়ও করতে পারতাম। এগুলো আদায়ের পর অবশেষে জাতীয়করণ।আমরা আমাদের কৌশলে এগুচ্ছিলাম। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলও নমনীয় ছিলেন। কিন্তু কতিপয়ের বাচালতা ও বাগাড়ম্বরতা সে পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সাধারণ শিক্ষকদের কাছে আমার বিনয়াবনত আরজ, আসুন আপনাদের অবসর ও কল্যাণ অফিসে দেখে যান। দেখে-শুনে পর্যালোচনা করে আমাদেরকে তিক্ত শব্দে, তীব্র ভাষায় সমালোচনা করুন, মেনে নেবো।
আইনে বলা আছে, কেউ যদি মনে করেন চাঁদা দেবেন না, দিতে হবে না। তিনি অবসর-কল্যাণ ভাতাও পাবেন না। জমানো চাঁদার টাকা ফেরৎ নিতে পারবেন।
আপাততঃ বিদায়, জানিনা কোন মহান শিক্ষক কোন্ অভিধানের কোন্ অভিধা আমার জন্যে তৈরি রেখেছেন।
লেখক: অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী, সদস্য-সচিব অবসর সুবিধা বোর্ড।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]