অনলাইন গণমাধ্যম ‘দৈনিক শিক্ষাডটকমে’ দেখলাম, “তিন মাসের মধ্যেই কল্যাণট্রাস্টের টাকা পেলেন বিএনপি নেতা সেলিম ভুইয়া।” সেলিম ভুইয়া তিন মাসে টাকা পেয়ে গেলেন, অথচ দেশের হাজার হাজার অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর দুই বছর পার হয়ে গেলেও টাকা পাচ্ছেন না।
সেলিম ভুইয়া কে তা অন্তত বেসরকারি শিক্ষকদের অজানা নয়। তিনি বিএনপি-জামাতপন্থি একজন শিক্ষক নেতা ছিলেন। একই সময়ে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকও। এক সময় তিনি এই কল্যাণট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য-সচিবও ছিলেন। তবে এইসব নেতারা যতটা না শিক্ষকদের কল্যাণে কাজ করেছেন তার চেয়েও বেশি নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থেকেছেন।
অগাধ সম্পত্তির মালিক তিনি। পত্রিকার মালিক। তার কোনো অভাব আছে বলে আমার মনে হয় না। তারপরও তিনি তিন মাসের মধ্যে কল্যাণট্রাস্টের টাকা পেয়ে গেলেন! তাও আবার ভুয়া ও অস্পষ্ট কাগজপত্র জমা দিয়ে! অথচ যে শিক্ষকদের নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন সেই শিক্ষকদের অনেকেই অবসরে যাওয়ার পর অবসর ও কল্যাণট্রাস্টের টাকা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কয়েকদিন আগে একজন শিক্ষক মারাও গেছেন। সেলিম ভুইয়াদের এটা অজানা নয়। কিন্তু শিক্ষকদের এই কষ্ট তার মতো স্বার্থপর নেতাদের হৃদয় স্পর্শ করে না। এরা নিজেরটা পেলেই খুশি।
আমার বড় ভাই একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে গিয়েছেন। তার দুটি ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে। বিকল্প কোনো আয় না থাকায় দুই একটি প্রাইভেট পড়িয়ে অতি কষ্টে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া এবং সংসার চালিয়ে নিতেন। কিন্তু করোনার জন্য গত মধ্য মার্চ থেকে সেই অবলম্বনটুকুও বন্ধ হয়ে আছে। যে কর্তৃপক্ষ সেলিম ভুইয়ার মতো বিত্তশালীদের মাত্র তিন মাসে অবসরের টাকা দিয়ে দিলেন, তারা কি ভাবতে পারেন আমার ভাইয়ের মতো এমন হাজার হাজার অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা এখন
কীভাবে দিনাতিপাত করছেন? কর্তৃপক্ষ বলবেন কি সাধারণ শিক্ষকরা যেখানে অবসরে যাওয়ার পর প্রায় তিন বছর ধরে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করেও টাকা পান না, সেখানে সেলিম ভুইয়া মাত্র তিন মাসে পেলেন কীভাবে?
জানি, কর্তৃপক্ষ এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করবেন না, দরকারও নেই। শুধু বিনীতভাবে অনুরোধ করি, যে সব সম্মানিত শিক্ষকরা অবসরে গিয়ে তাদের শেষ জীবনের শেষ সম্বলটুকুর জন্য আবেদন করে প্রহরের পর প্রহর গুনছেন তাদের পাওনাটা মিটিয়ে দিন।
লেখক : প্রভাষক, সরকারি ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ, ফকিরহাট, বাগেরহাট।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]