সরকারি বাঙলা কলেজে ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফেরদৌসি খান। কিন্তু তার পরও নারী শিক্ষার্থীরা অবহেলিত। এদের অনেকে যৌন হয়রানির মতো অপরাধ ঘটছে বলে অভিযোগ করেছে। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন ও তানজিদ বসুনিয়া।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা নিয়মিত হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ ছাত্রীরা। সর্বশেষ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান অনিকের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় এবং সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান মিয়া জীবনের চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারের অভিযোগে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। বর্তমানেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে ছাত্রীরা।
পত্রিকার পক্ষ থেকে কয়েক দিন ঘুরে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে, মূল ফটকের পাশে, বাংলা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সামনে (লেকের ধারে) ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশ না করে একজন ছাত্রী বলেন, ‘কিছু ছেলে আছে, ওরা মানুষ না। প্রত্যেক দিন কলেজে আসার সময় এবং ক্লাস শেষে কলেজ থেকে যাওয়ার সময় এরা গেটের পাশে দাঁড়িয়ে নানা ধরনের বাজে মন্তব্য করে।
মেয়েরা কোনো উপায় না পেয়ে মুখ বুজে ক্লাস শেষ করে চলে যায়। এদের বিচার করবে কে?’
গত বছর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির সভাপতি কর্তৃক একজন ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত ও মারধর করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
সরকারি বাঙলা কলেজে প্রায় অর্ধেক নারী শিক্ষার্থী হলেও মেয়েদের জন্য কোনো ছাত্রাবাস নেই।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সোনিয়া আখতার বলেন, ‘ছাত্রদের জন্য (নির্মিতব্য হলসহ) দুটি হল থাকলেও ১০ হাজার ছাত্রীর জন্য কোনো হল নেই। আমাদের অনেকে আছেন যাঁরা অনেক দূর-দূরান্ত থেকে এসে ক্লাস করেন। বিভিন্ন সময় মেয়েদের জন্য হলের কথা বলা হলেও আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি।’
ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিনুর সুলতানা বলেন, ‘এখানে এতগুলো মেয়ে পড়াশোনা করছে অথচ তাদের থাকার ব্যবস্থা নেই। আমার এক বান্ধবী প্রতিদিন ধামরাই থেকে যাওয়া-আসা করে। বাসা থেকে কলেজে আসা-যাওয়া করতেই প্রতিদিন ওর চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় চলে যায়। যাদের বাসা ঢাকার মধ্যে তাদের জন্য খুব বেশি সমস্যা না হলেও যারা দূর থেকে আসে তাদের কষ্টের সীমা নেই।’
এ ছাড়া কলেজে ক্যান্টিন না থাকায় ছেলেরা দৌড়ে গেটের বাইরে গিয়ে পানি খেতে পারে। মেয়েদের জন্য তা অত্যন্ত কষ্টকর। ফলে বেশির ভাগ মেয়ে ব্যাগে করে পানি নিয়ে আসে। যারা আনে না তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় সকাল ও বিকেলে ক্লাস থাকে। তখন দুপুরের খাবার নিয়েও বিপাকে পড়তে হয় মেয়েদের। এ ছাড়া কলেজে মেয়েদের জন্য পর্যাপ্ত ওয়াশরুম নেই। ক্লাস যেখানেই হোক, যেই ফ্লোরে ওয়াশরুম আছে সেখানেই যেতে হয় মেয়েদের।
প্রাচীন এই কলেজটিতে পরিবহন সমস্যা প্রকট। ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে এসে মেয়েরা এই কলেজে পড়ে। তাদের ব্যাপক যাতায়াত সমস্যায় পড়তে হয়। সকালে ও বিকেলে পিক আওয়ারে বাসে উঠতে মেয়েদের ভীষণ বিপাকে পড়তে হয়।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী লিমা আক্তার বলেন, ‘আমার বাসা সাভার। এই রুটে অনেক বাস চললেও সকালে ও বিকেলে প্রচণ্ড ভিড় থাকে। উঠতে অনেক কষ্ট হয়। আসা-যাওয়ার ভয়ে অনেক সময় কলেজে আসা হয় না। যদি আমাদের কলেজের বাস থাকত, তাহলে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারতাম।’
কলেজটিতে নেই মেয়েদের কমনরুম। ক্লাস বিরতিতে মেয়েরা খুব সমস্যায় পড়ে যায়। একটু বিশ্রাম নিতে কিংবা পড়াটা ঝালাই করে নিতে কোনো উপায় নেই। ফলে বিরতির সময় বিক্ষিপ্তভাবে মেয়েদের সময় কাটাতে হয়। আবার কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য একটি লাইব্রেরি থাকলেও সেটি বর্তমানে ব্যবহৃত হয় পরীক্ষার হল হিসেবে। ফলে বিরতির সময় মেয়েরা যে লাইব্রেরিতে গিয়ে একটু লেখাপড়া করবে তারও উপায় নেই।
কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফেরদৌসি খান বলেন, ‘আমি আসার আগে এখানে মেয়েদের কমনরুম ছিল না। তবে আমি আসার পর অনেক চেষ্টায় একটি কক্ষ ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মেয়েদের কমন রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি ১০ তলা ভবনের কাজ শেষ হলে সেখানে অন্তত দুটি কমনরুমের ব্যবস্থা করতে পারব।’