অবৈধ দাবি করায় অধ্যক্ষ শামীমকে বের করে দিলেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক - দৈনিকশিক্ষা

অবৈধ দাবি করায় অধ্যক্ষ শামীমকে বের করে দিলেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এসএসসির টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা, বহিষ্কৃত ও নিবন্ধিনহীন স্কুল শিক্ষার্থীদের অবৈধভাবে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ভীড় জমিয়েছেন কতিপয় প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ ও দালাল। রোববার সকাল থেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কক্ষের সামনে শত শত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, দালাল ও অভিভাবকদের দেখা যায়। তারা প্রবেশপত্র পেতে মরিয়া। আগামীকাল ৩ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে।

ঢাকা বোর্ডে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষা বোর্ডের একশ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান শামীমস অবৈধ কাজ করে আসছে। আজ শামীম গিয়েছেন শিক্ষা বোর্ডে অবৈধভাবে প্রবেশপত্রের দাবি নিয়ে। গতমাসে শামীমের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে কলেজটির কয়েকজন শিক্ষক। তালা ভেঙ্গে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কক্ষে প্রবেশের অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে মামলার বিবরণীতে।  

জানা যায়, টেস্টে ফেল করা ও নকলের দায়ে বহিষ্কার হওয়া ২২ জন শিক্ষার্থীকে বিপুল টাকার বিনিময়ে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার চুক্তি হয়। এই চুক্তির অংশ হিসেবে ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ভীড় জমান দক্ষিণ বনশ্রী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বরখাস্ত অধ্যক্ষ। অবৈধ দাবি নিয়ে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম আমীরুল ইসলামের কক্ষে প্রবেশ করলে তিনি অধ্যক্ষকে বের হয়ে যেতে বলেন। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকও এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

অবৈধ ২২ পরীক্ষার্থী মধ্যে একটি বিএনপিপন্থী টিভি চ্যানেলের একজন সাংবাদিকের আত্মীয় রয়েছেন বলে জানা যায়। এই সাংবাদিক শামীমের পক্ষে কাজ করেন বলে জানা যায়। রোববার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত শামীমকে বোর্ড অফিসে দেখা যায়।

এর আগে গত বছরের মে মাসে বলাৎকারের অভিযোগে চার বছরের বেশি সময় ধরে বরখাস্ত থাকা দক্ষিণ বনশ্রী মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষককে চাকরিতে পুনর্বহাল ও নিয়মিত বেতন ভাতা দেয়ার নির্দেশ দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এছাড়া কলেজটির সভাপতি আওয়ামী লীগের সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরীর স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ মো. সিদ্দিকুর রহমান শামীমকেও চাকরিতে পুনর্বহাল করার তদবির শুরু হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলটির ৮ম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রকে বাসায় ডেকে নিয়ে বলাৎকারের অভিযোগ ওঠে সহকারী শিক্ষক মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে। অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেন ওই সময়ের অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান শামীম। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে অভিযোগ ওঠার পর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর পর্যন্ত স্কুলে আসেননি ব্যাচেলর শিক্ষক জাকির হোসেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অভিযুক্ত জাকির হোসেন কাজে যোগদান ও পুরো সময়ের বকেয়া বেতন-ভাতার টাকা ৭ দিনের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দেন। এতে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। 

এদিকে, অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ও তিন বছর ধরে বরখাস্ত থাকা অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান শামীমও চাকরি ফিরে পাওয়ার জোর তদবির করছেন বলে জানা যায়। তাকে গত কয়েকদিন যাবত ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কক্ষের সামনে দেখা গেছে।

সিদ্দিকুর রহমান শামীমের অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থাকা ও নিয়োগ বোর্ডে কোরাম পূর্ণ না হওয়ার ঘটনা ধরা পড়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক গৌর মন্ডলের তদন্তে। দক্ষিণ বনশ্রী মডেল কলেজে যোগদানের আগে সিদ্দিকুর রহমান ছয় বছর একটি এনজিওতে চাকরি করেছেন। কিন্তু এসব তথ্য গোপন রেখে তাকে এমপিওভুক্ত করায় শিক্ষা ভবনের একটি দালাল চক্র। সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে তাকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু তার একজন নিকটাত্মীয় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেত্রী রয়েছেন, যিনি শিক্ষা বোর্ড ও অধিদপ্তরের ঘোরাঘুরি করে শামীমকে পুনর্বহাল করার চেষ্টা করছেন। 

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের নির্দেশে সিদ্দিকুর রহমান শামীমের বিরুদ্ধে আনীত আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত শেষ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। তদন্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে জানা যায়। 

অভিযোগের বিষয়ে শামীমের মতামত জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। 

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069839954376221