সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও সরকারি বিধান মেনে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি ও পরীক্ষায় অংশ নেননি এক লাখের বেশি প্রাথমিক শিক্ষক। অনুমতি না নেয়ায় তাদের উচ্চশিক্ষার সনদগুলো অবৈধভাবে অর্জিত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সেইসব সনদ বৈধ করে পদোন্নতিসহ নানা আর্থিক সুবিধা নিতে চান এইসব শিক্ষকরা। অবৈধভাবে নেয়া সনদগুলো সার্ভিসবুকে যুক্ত করতে চান তারা। এর জন্য নামধারী কতিপয় সাংবাদিককে ম্য্যানেজ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করানো শুরু করেছেন। আর এইসব অবৈধ সনদ বৈধ করার ঠিকাদারি নিয়েছেন সামশুল আলম নামের এক জামাতপন্থী শিক্ষক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল সভায় বিদায়ের আগে খুশী করার জন্য শিক্ষকদের এই সনদের পক্ষে কথা বলেছেন বলে শিক্ষকরা প্রচার করছেন। গণশিক্ষার এই কর্মকর্তা আসছে অক্টোবরে অবসরে যাবেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, সরকারি চাকরি নেয়ার পর সার্বক্ষণিক চাকরি করে কিভাবে এই শিক্ষকরা চার বছর মেয়াদী অনার্স, দুই/তিন বছর মেয়াদী ডিগ্রি পাস কোর্স ও মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি, নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা দিলেন? এইসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে শিক্ষকরা সাংবাদিকদের দিয়ে ফোন করায়, নেতারা এসে তদবির করেন।
দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, সামছুল আলমের পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করানো হয়েছে। সেখানে অবৈধভাবে সনদ নেয়া ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষকের কাহিনী বর্ণনা কর হয়েছে। অনুমতি ছাড়া ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে মাস্টার্স শেষ পর্বের পরীক্ষায় অংশ নেন এই শিক্ষক। পরে বেশ কয়েকবার উপজেলা শিক্ষা অফিসকে ম্যানেজ করে অনুমতিপত্র পাওযার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সোয়া লাখের মধ্যে অনেক শিক্ষক নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে শিক্ষা অফিসে মোটা অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে পূর্বানুমতি দেখিয়ে কিছু কিছু সনদ অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছেন। তবে বেশিরভাগ শিক্ষকই তা পারেননি।
জানা যায়, আগে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের অ্যান্ট্রি পদে নারীদের জন্য উচ্চমাধ্যমিক ও পুরুষদের জন্য স্নাতক ডিগ্রি যোগ্যতা নির্ধারণ করা ছিল। এই পদে ৬০ শতাংশ শিক্ষকই আবার নারী। তাই নারী শিক্ষকের বড় অংশই উচ্চমাধ্যমিক পাস করে এই চাকরিতে আসেন। পরে অনেকে ডিগ্রি ও মাস্টার্স করেন।
সহকারী শিক্ষকদের নতুন নিয়োগ বিধি-২০১৯ অনুযায়ী, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি। তাই স্নাতক হয়েও অনেক নারী শিক্ষক সরকারি কাগজে-কলমে এখনও উচ্চমাধ্যমিক পাস। এ কারণে সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করা হলেও এই শিক্ষকরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জানা যায়, নোয়াখালী সদর উপজেলার দামোদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুসরাত ফেরদৌস জিলানী ও সাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কৃপা দাস দুইজনই অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার আগে চাকরিতে যোগদান করেন। নিয়মিত কোর্স হওয়ার কারণে ডিপার্টমেন্ট থেকে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি না পাওয়ায় নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে তৃতীয় বর্ষ ও শেষ বর্ষের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেন। কিন্তু সার্টিফিকেট সার্ভিসবুকে সংযুক্ত করতে পারেননি। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেও তারা এইচএসসি পাস শিক্ষক হিসেবেই পরিচিত।