অবৈধভাবে মেয়েকে নিয়োগ দেন রাবির সাবেক উপাচার্য - দৈনিকশিক্ষা

অবৈধভাবে মেয়েকে নিয়োগ দেন রাবির সাবেক উপাচার্য

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

অনুমতি ছাড়াই তথ্য জালিয়াতি করে স্কুল খুলে অযোগ্য স্ত্রীকে সহযোগী অধ্যাপকের চেয়ারে বসিয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য মিজানউদ্দিন। নিজ কন্যাকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতেও হেঁটেছেন অবৈধ পথে। শূন্য পদ না থাকার পরও কন্যাকে নিয়োগ, বিজ্ঞাপিত নিয়োগকে অন্যপদে স্থানান্তর, মাত্র দু'জন চাকরিপ্রার্থীকে নিয়ে নিয়োগ বোর্ড বসানোর মতো গুরুতর অনিয়ম পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৯ অক্টোবর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন সৌরভ হাবিব ও নুরুজ্জামান খান। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন দায়িত্বে থাকাকালীন এমনই নানা অপকর্ম করেছেন। যা এখনও উঠে আসছে আলোচনায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টহাউস ক্রয়ের নামে ১০ কোটি টাকার 'নয়ছয়', যোগ্যতা না থাকার পরও নিজ ক্ষমতাবলে তথ্য জালিয়াতি করে নিজের স্ত্রীকে সহযোগী অধ্যাপকের মর্যাদায় পদায়ন করেছেন তিনি। এবার তার কন্যা রিদিতা মিজানকে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে নানা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পদ শূন্য না থাকার পরও নিয়োগ, বিজ্ঞাপিত নিয়োগকে অন্যপদে স্থানান্তর, মাত্র দু'জন চাকরিপ্রার্থীকে নিয়ে নিয়োগ বোর্ড বসানোর মতো গুরুতর অনিয়ম পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মেয়েকে নিয়োগ দিতেই দায়িত্ব পাওয়ার পর শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক স্বাক্ষরিত একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে দুটি প্রভাষক পদে নিয়োগ দিতে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। অথচ সে সময় ইংরেজি বিভাগের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী প্রভাষকের কোনো শূন্য পদ ছিল না। তবে কয়েকটি সহকারী অধ্যাপক পদ শূন্য ছিল। এ ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী বিভাগটিতে নিয়োগ দিতে হলে বিজ্ঞপ্তিতে অবশ্যই 'সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক' পদ উল্লেখ করতে হতো।

এতে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ্যরা নিয়োগ পেতেন। যদি সহকারী অধ্যাপক প্রার্থী দিয়ে শূন্য পদ পূরণ না হতো সে ক্ষেত্রে ওই শূন্য পদের বিপরীতে প্রভাষক নিয়োগ দিতে পারত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিনের মেয়ে রিদিতা মিজানের নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি দলিল (ডকুমেন্টস) এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেসব ডকুমেন্টসে দেখা যায়, ইংরেজি বিভাগের ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির দুটি পদের বিপরীতে আবেদন জমা হয় মাত্র ছয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া শর্ত পূরণ করে সাবেক উপাচার্যের মেয়েসহ মাত্র দু'জন প্রার্থীর আবেদন বৈধ হয়। ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল দুটি পদের বিপরীতে মাত্র দু'জন প্রার্থীকে নিয়ে নিয়োগ বোর্ড বসান উপাচার্য মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন। ২১ এপ্রিলের সিন্ডিকেট সভায় তার মেয়ের চেয়ে তুলনামূলক বেশি (সনাতনী পদ্ধতিতে) রেজাল্ট স্কোর (বিভাগ) থাকার পরও প্রার্থী মিজানুর রহমানকে বাদ দিয়ে শুধু মেয়ে রিদিতা মিজানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২২ এপ্রিল থেকে তার নিয়োগ কার্যকর হয়। তবে প্রায় সাত মাস পর একই বছরের ১১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি-রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) আব্দুস সাত্তার স্বাক্ষরিত একটি আদেশ জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়, 'ইংরেজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক পদ শূন্য ছিল। তবে ওই পদে নিয়োগে কেবল প্রভাষক পদ উল্লেখ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় বিভাগে স্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষক রিদিতা মিজানকে সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষকের শূন্য স্থায়ী পদের বিপরীতে স্থায়ী প্রভাষক পদ হিসেবে গণ্য করা হলো।'

এ ছাড়া সাবেক উপাচার্য ২০১২ সালের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করে ২০১৫ সালে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করেন। এর কিছুদিন পরই নতুন নীতিমালায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিজের মেয়েকে নিয়োগ দেন। নতুন নীতিমালার সব শর্ত তার মেয়ের রেজাল্টের সঙ্গে হুবহু মিল পাওয়া যায়।

এসব বিষয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দিন বলেন, 'এখানে আমি কিছু বলিনি। এখানে শূন্যপদ ছিলো কিনা তা সংশ্নিষ্ট বিভাগ বলতে পারবে। আমি কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। ওই নিয়োগ বোর্ডে আমি ছিলাম না।' তিনি বলেন, 'আমি সাবেক উপাচার্য বলেই ব্যক্তি হিসেবে আমার মেয়েকে নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। একজন কৃষকের মেয়ে এভাবে নিয়োগ পেলে আলোচনা হতো না।'

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, 'রিদিতা মিজানের নিয়োগ মোটেও আইনসিদ্ধ হয়নি। তাকে নিয়োগ দিতে চার-পাঁচটি অনিয়মের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে সাবেক উপাচার্য মিজানউদ্দিন মেয়েকে নিয়োগ দেন। পরে ছয় মাস পর বিষয়টি ধরা পড়ার পর গোঁজামিল দেওয়া হয়। বিষয়টি যেহেতু আইনসিদ্ধ হয়নি, তাই আইনগত কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে।

ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0071790218353271